মাহমুদুল আলম: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী। কাউন্সিলর পদের প্রার্থী হিসেবে স্বাক্ষর করা তার হলফনামায় আয়ের উৎসে লেখা হয়েছে, ব্যবসা থেকে আয় চার লাখ ৮৮ হাজার টাকা। আর ব্যবসার ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমদানীকারক’।
যদিও হলফনামায় স্বাক্ষর করার ঠিক আগের দিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মন্নাফীর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রতিদিন শুধু কাপ্তানবাজার মুরগিপট্টি থেকেই দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করেন তিনি। এ ছাড়া ময়লা সংগ্রহের নামে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু হলফনামায় এসব আয়ের উল্লেখ নেই।
হলফনামায় তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এইচএসসি’।
হলফনামায় স্বাক্ষর করার সময় তিনি একটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন। শাহবাগ থানায় করা ওই মামলাটি ঢাকার সিএমএম আদালত আমলে নিয়েছিল। এছাড়া অতীতেও তিনি একটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন, সিএমএম আদালত থেকে ওই মামলায় তিনি অব্যাহতি পান বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি।
এতে তার ব্যবসা / পেশার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ‘স্বত্তাধিকারী: গৌরব এন্টারপ্রাইজ, ঠিকানা: ২৭-৩২ মদনপাল লেন, ঢাকা। ব্যবসার ধরণ: আমদানীকারক’।
হলফনামায় প্রার্থীর এবং তার উপর নির্ভরশীলদের আয়ের উৎস বিষয়ে তার ব্যবসা থেকে আয় দেখানো হয়েছে চার লাখ ৮৮ হাজার টাকা (২০১৯-২০ কর বর্ষ)। এই খাতে তার উপর নির্ভরশীলদের আয়ের ঘরে লেখা হয়েছে ‘প্রযোজ্য নহে’। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত বিষয়ে তার ঘরে লেখা আছে ‘ডিপিএস চলমান আয়কর নথীতে বর্ণিত’। এক্ষেত্রেও তার উপর নির্ভরশীলদের ঘরে লেখা হয়েছে ‘প্রযোজ্য নহে’। এছাড়া আয়ের অন্যান্য খাত কৃষি ও বাড়ী বা এপার্টমেন্ট বা দোকান বা অন্যান্য ভাড়া, পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক ইত্যাদি), চাকুরী এবং অন্যান্য বিষয়ে উভয়ের ঘরে লেখা হয়েছে, ‘প্রযোজ্য নহে’।
হলফনামায় প্রার্থীর নিজের এবং তার স্ত্রীর পরিসম্পদের ঘরে নগদ টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে যথাক্রমে ২০ হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রার্থীর পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের পরিমাণের ঘরে উল্লেখ করা আছে এফডিআর পাঁচ লাখ টাকা, ইবিএলে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা, সিটি ব্যাংকে ডিপিএস ৫১ হাজার টাকা, লংকা বাংলা ফাইন্যান্সে এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে তার স্ত্রী এবং প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের ঘরে লেখা আছে ‘প্রযোজ্য নহে’। প্রার্থীর স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলংকারাদি উল্লেখ করা আছে ৭০ তোলা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী দুই লাখ ৪৮ হাজার টাকা, আসবাবপত্র দুই লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এসব ক্ষেত্রে তার স্ত্রী এবং প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের ক্ষেত্রে লেখা আছে ‘প্রযোজ্য নহে’। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা, বন্ড, ঋণপত্র স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভূক্ত ও তালিকাভূক্ত নয় এমন কোম্পানীর শেয়ার, বাস, ট্রাক, মটরগাড়ী ও মটর সাইকেল ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রার্থী, তার স্ত্রী এবং প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের ঘরে লেখা আছে ‘প্রযোজ্য নহে’।
পরিসম্পদে তার স্থাবর সম্পদের বিষয়ে শুধু পিতা-মাতার অকৃষি জমির অংশীদার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়সহ স্থাবর সম্পদের সব বিষয়ে প্রার্থীর নিজের, তার স্ত্রীর এবং প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলের ঘরগুলোতে লেখা আছে ‘প্রযোজ্য নহে’। বিষয়গুলো হলো কৃষি জমি, দালান, আবাসিক/বাণিজ্যিক, বাড়ি/এ্যাপার্টমেন্ট, চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস খামার ও অন্যান্য।
আর দায়-দেনা বিষয়ে লেখা আছে ‘কোন দায়-দেনা নাই’।
২০১৯ সালের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর এই হলফনামায় স্বাক্ষর করেন তিনি। একইদিন আইনজীবী এ.এস.এম. আমিনুল হক তাকে সনাক্ত করার পর আইনজীবী (নোটারী পাবলিক) মো. ইসলাম-আল রাজী তাতে স্বাক্ষর করেন।
তবে হলফনামায় স্বাক্ষরের আগের দিন ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আহমদ ইমতিয়াজ মন্নাফীর প্রসঙ্গে লেখা হয়, ‘আসন্ন নির্বাচনে ডিএসসিসির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সরকারদলীয় সমর্থন পেয়েছেন আহমদ ইমতিয়াজ মন্নাফী। তরুণ এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাপ্তানবাজারের মুরগিপট্টি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে সেখান থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মনির নামের এক কর্মীকে দিয়ে দৈনিক কাপ্তানবাজার শুধু মুরগিপট্টি থেকেই দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করেন তিনি। এ টাকা আদায় নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় সরকারদলীয় লোকজনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ ছাড়া ময়লা সংগ্রহের নামে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।‘
সান নিউজ/আরআই