নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারঘোষিত লকডাউনে ঢাকার বায়ুমানের উন্নতি হয়েছে। লকডাউনের ফলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন ধরনের পরিবহন, কলকারখানাসহ বায়ুদূষণের অন্য উৎস বন্ধ থাকায় এ উন্নতি ঘটেছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে ঢাকায় সবচেয়ে খারাপ এবং অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল। এই তিন মাসে ঢাকায় বায়ুর গুণমান ১২ দিনের জন্য বিপদজনক, ৫৮ দিনের জন্য অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ১৯ দিনের জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছিল। এবছর একিউআইয়ের দৈনিক গড় স্কোর ছিল জানুয়ারিতে ২৬১, ফেব্রুয়ারিতে ২৩১ এবং মার্চ মাসে ২১১।
একিউআই সূচকে ৫০ এর নিচে স্কোর থাকলে বাতাসের মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ স্কোরের মধ্যে থাকলে বাতাসের মান গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীদের জন্য সংবেদনশীল, স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা ভাবা হয়।
একিউআই মান ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ৩০১ থেকে ৫০০ বা তারও বেশি হলে বাতাসের মান মনে করা হয় ঝুঁকিপূর্ণ।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকার বায়ুমান ১৫০ এর নিচে দেখা যাচ্ছে। যা এবছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের বায়ুমান থেকে অনেকটাই ভালো।
বর্তমানে ঢাকার বায়ুর উন্নতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, লকডাউনে বায়ুমানের উন্নতিতে এটা পরিষ্কার যে এতদিন বায়ুদূষণের যে উৎসগুলোর কথা বলা হচ্ছিল, এখন বাস্তবে প্রমাণিত হলো।
বায়ুমান উন্নয়নে কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে সেটাও চিহ্নিত হলো। সরকার যে নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা ফেলে না রেখে এগিয়ে নিতে হবে। জনসাধারণসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে, স্বল্পমেয়াদী, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার নির্মোহ বাস্তবায়ন করতে হবে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, লকডাউনে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন বন্ধ রয়েছে, যানবাহন বন্ধ থাকায় বাতাসে ধুলাবালির দূষণও কমেছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানা বন্ধ থাকায় বর্তমানে বাতাসের মান অনেকটা উন্নত হয়েছে।
এ বিষয়ে পবার সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, লকডাউনে এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, যানবাহনের ধোঁয়া, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি এবং কলকারখানা হচ্ছে বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। এই উৎসগুলি যদি আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি তাহলে আমাদের দেশের বায়ুরমান স্বাস্থ্যকর অবস্থায় রাখতে সক্ষম হবো।
একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সচল রাখতে হবে, তবে তা যেন পরিবেশের ক্ষতি না করে। বরং পরিবেশ ও বায়ুর উন্নয়নের প্রতি লক্ষ্য রেখে যদি করা হয় তাহলে আমাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং উন্নত বায়ুর মান নিশ্চিত করা যাবে।
সান নিউজ/এম