নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়ন মডেল এখন বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। কোনো উন্নয়ই যেন এখন আর স্বপ্ন নয়। বরং কঠিন বাস্তবতা অতিক্রম করে স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। চলমান উন্নয়নের এ ধারায় স্বপ্ন নয় বাস্তবতার দাড়প্রান্তে মেট্রোরেল। এ ধারা আরো বেগবান করতে মেট্রোরেলের বগি এখন ঢাকায়। উত্তরার দিয়াবাড়ির জেটিতে বুধবার বিকেলে নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগেই মেট্রোরেলের বগির প্রথম চালান পৌঁছেছে।
রাজধানীর যানজট নিরসনে বিলিয়ন ডলারের স্বপ্নের মেট্রোরেল কেমন হবে? কতোটা নিরাপদই বা হবে? যানজটই বা কতটা নিরসন হবে? এ নিয়ে দেশবাসীর আগ্রহ ও প্রশ্নের কমতি নেই। এ প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্টরা কর্তৃপক্ষ বলছে মেট্রোরেলের বগিগুলোর দুইপাশে দুটি দরজা থাকবে। যেপাশে স্টেশন থাকবে সেপাশের দরজাই খুলবে। যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিটি দরজায় একাধিক সেন্সর থাকবে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী বা হুইলচেয়ারে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্থান থাকবে। প্রায় দুই হাজার যাত্রী একসঙ্গে একেকটি ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবে। সে অনুযায়ী প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। প্রথমে আলাদা আলাদাভাবে লাইন উদ্বোধনের কথা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর একযোগে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো লাইনের উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রথম চালানে মেট্রোরেলের বগি আছে ছয়টি। উল্লেখ্য,২৩ এপ্রিল বগিগুলো এসে পৌঁছানোর কথা ছিল। গত ৪ মার্চ জাপানের কোবে বন্দর থেকে এমভি এসপিএম ব্যাংকক নামের একটি জাহাজযোগে এসব বগি পরিবহন শুরু হয়।
উল্লেখগত ২৪ মার্চ পায়রা বন্দরে বগিগুলো পৌঁছে। ছয়টি বগি নিয়ে পায়রা বন্দর থেকে জাহাজটি গত ৩০ মার্চ মোংলা বন্দরে পৌঁছে। ৩১ মার্চ এগুলো জাহাজ থেকে খালাস করা হয়। পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়াশেষে নদীপথে বগিগুলোর পরিবহন শুরু হয়। গত সোমবার ( ১৯ এপ্রিল) চাঁদপুর এসে পৌঁছায় বগিগুলো। সেখান থেকে নৌপথে বুধবার ঢাকা এলো।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ঢাকার উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলপথ স্থাপনের কাজ সবমিলে এগিয়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। বুধবার সরেজমিনে রাজধানীর শাহাবাগ ও মতিঝিল এলাকায় ঘুড়ে দেখাযায়, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিনে ও রাতে প্রকল্প এলাকায় কাজ চলছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ২৪ সেট ট্রেন তৈরি করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি। প্রতি সেট ট্রেনের দুপাশে দুটি ইঞ্জিন থাকবে। এর মধ্যে থাকবে চারটি করে কোচ। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১৫০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোতে থাকবে লম্বালম্বি আসন। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দুটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুপাশে থাকবে চারটি করে দরজা। জাপানি স্ট্যান্ডার্ডের নিরাপত্তাব্যবস্থা সংবলিত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে এক হাজার ৭৩৮ জন।
ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক আরো জানান, উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোর পাশে ভিজিটর সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এমআরটি তথ্য ও প্রদর্শন কেন্দ্রের ভেতরেই রাখা হবে নমুনা ট্রেনটি। সেখানেই দর্শনার্থীদের টিকেট কাটা, ট্রেনে চড়া, দাঁড়ানো, ট্রেন থেকে নামা- এসব বিষয়ে ধারণা দেয়া হবে।যাত্রীদের ধারণা দিতে একটি ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, রাজধানীর রাস্তার মাঝ বরাবর উপর দিয়ে চলবে মেট্রোরেল। স্টেশন হবে প্রায় দোতলা সমান উঁচু। বিনা টিকেটে কেউ ভ্রমণ করলে গুণতে হবে জরিমানা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে স্বল্প সময়ে মতিঝিলে পৌঁছানো যাবে। প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনে স্টেশন থাকবে ১৬টি। প্রতি চার মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। প্রতি ঘণ্টায় যাত্রী পরিবহন করবে প্রায় ৬০ হাজার। এই রেলপথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। মোট টাকার ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র প্রকল্প ঋণ। আর বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থাকছে ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।
মেট্রোরেল ব্যবস্থায় প্রথম ধাপে প্রতিদিন ২৪টি ট্রেন চলাচল করবে। প্রতি ট্রেনে থাকবে ছয়টি বগি। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে ট্রেনগুলো। একটি স্টেশনে ট্রেন অবস্থান করবে ৪০ সেকেন্ড।
১৬টি স্টেশন থাকবে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল।
সাননিউজ/এমআর/আরআই