নিজস্ব প্রতিবেদক : চিকিৎসক-স্বাস্থ্য কর্মীদের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক, অসৌজন্যমূলক ও হিংসাপরায়ন আচরণ থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছে, নতুবা পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।
বুধবার (২১ এপ্রিল) সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের পাঠানো ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে করোনা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার চরম সমালোচনা করে এ হুশিয়ারীর কথা জানান।
তারা বলেন, করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করার পর থেকেই সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীগণ তাদের মহান পেশার সম্মান সমুন্নত রাখতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। সারাবিশ্ব তাদের এই আত্মত্যাগকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সম্মানিত করছেন।
নেতৃদ্বয় বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীগণ যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যতীত সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিরলস ভাবে লড়াই করে যাচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদান করতে গিয়ে ইতিমধ্যে ১৮৩জন চিকিৎসক শহীদ হয়েছেন, সহস্রাধিক চিকিৎসকসহ অসংখ্য স্বাস্থ্য কর্মী ভাইরাসটির সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিকিৎসক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে আছেন।
অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিবর্তনমূলক, অসম্মানজনক, বৈষম্যমূলক, বিমাতাসূলভ আচরন করছেন এবং বিভিন্নভাবে নাজেহাল করছেন।
তারা বলেন, সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের প্রজ্ঞাপনে চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের নিজনিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করার নিমিত্তে চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছি সারাদেশেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু ব্যক্তির অতিউৎসাহী ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে হয়রানি করা হয়েছে, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে বেআইনী ভাবে জরিমানা করা হয়েছে। এটা স্পষ্টতই সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার এবং চিকিৎসক সমাজের প্রতি কোন বিশেষ মহলের আক্রোশ ও প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।
তারা বলেন, ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী সনাক্ত হওয়ার পর সরকারের উচিত জরুরী ভিত্তিতে জাতীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠনপূর্বক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন করে সেই মোতাবেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সরকার বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণের বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে একনায়ক মানসিকতায় এককভাবে দলীয় বিবেচনায় মহামারী মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। ফলশ্রুতিতে শুরু থেকেই সমন্বয়হীন বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
ড্যাব নেতারা বলেন, করোনা মহামারী প্রতিরোধের যথেষ্ট হোমওয়ার্ক না থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনে সমর্থ না হওয়ায় রাজধানীতে করোনার প্রকোপ ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রী ঢাকার করোনা পরিস্থিতি কে বারুদের সাথে তুলনা করেছেন। স্বাস্থমন্ত্রী বলেছেন সারা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল ঘোষনা করলেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। এমতাবস্থায়ও চিকিৎসকগণ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের সহযোগিতায় সাহসের সাথে করোনা রোগীদের নিরলসভাবে সেবা প্রদান করছেন। বিগত বছর ঘোষিত প্রণোদনা বিভিন্ন বিভাগের সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা পেলেও স্বাস্থ্য বিভাগ এখনও অবহেলিত। সরকারের ন্যুনতম কৃতজ্ঞতা বোধের বহিঃপ্রকাশ চিকিৎসকগণ পাচ্ছেন না। উপরন্তু লকডাউনকালীন সময়ে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় সরকারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাস্তায় চিকিৎসকগণ নাজেহাল হচ্ছেন -যা একান্তই অনভিপ্রেত, অগ্রহনযোগ্য, নিবর্তনমূলক।
সাননিউজ/টিএস/এম