রাসেল মাহমুদ : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় গত বছরের মতো এ বছরও সরকার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম দফায় গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন দিলেও পরে তা বাড়ানো হয়। গত ১৪ এপ্রিল থেকে চলছে কঠোর লকডাউন। চলবে ২১ এপ্রিল রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। অনেকের ধারনা লকডাউন আরও বাড়তে পারে।
চলমান লকডাউনের কারণে বিপাকে পড়েছে অনেক স্বল্প আয়ের মানুষ। গত বছরের লকডাউনে চাকরি হারিয়ে অনেকেই এখনো বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে জীবন-যাপন করছেন। এ বছরের লকডাউন দীর্ঘ হলে অনেক চাকরীজীবীর বেকার হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোগ। ইতিমধ্যে অনেকের আয়ও কমেছে। এ অবস্থায় বাড়িভাড়া নিয়ে চিন্তিত রাজধানীর ভাড়াটিয়ারা। তারা চাচ্ছেন, সরকার লকডাউন চলাকালীন সময়ে বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করে প্রজ্ঞাপন জারি করুক।
ভাড়াটিয়ারা বলছেন, লকডাউনের ফলে দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর এই শ্রেণির কথা কেউ ভাবছে না। এই মানবিক সংকট থেকে উত্তরণে ক্ষতিগ্রস্তদের এক মাসের দোকান ভাড়া ও বাড়ি ভাড়া মওকুফ চাই।
এদিকে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত ভাড়াটিয়াদের এক মাসের ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে ভাড়াটিয়া পরিষদ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির দাবি, লকডাউনের কারণে ভাড়াটিয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকেই কাজ হারিয়েছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় দোকান ভাড়া বা বাড়ি ভাড়া দেয়া খুবই কষ্টরকর হবে। তাই অন্তত একমাসের ভাড়া মওকুফ চান তারা।
গত ১১ এপ্রিল সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি মোঃ বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউনের চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের ফলে দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে সে ভাবনা কেউ ভাবছে না। আমরা এই মানবিক সংকট থেকে উত্তরণে ক্ষতিগ্রস্তদের এক মাসের দোকান ভাড়া ও বাড়ি ভাড়া মওকুফে সরকার ও বাড়িওয়ালাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে পোশাকশিল্প সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় লকডাউনের ফলে যদি ছুটি ঘোষণা করা হয় তাহলে কোন শ্রমিকের বেতন যেন কর্তন না হয় যে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, লকডাউন ও পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লকডাউনে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এড়াতে বিশেষ রেশনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের জোর দাবি জানাচ্ছি।
জানতে চাইলে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি মোঃ বাহারানে সুলতান বাহার সাননিউজকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই ভাড়াটিয়াদের সমস্যার কথা সরকারকে বলে আসছি। কিন্তু সরকার আমাদের কথাতো শোনে না। প্রাথমিকভাবে আমরা এক মাসের ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়েছি। দেখি সরকার কি করে। এই মাস দেখে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।
সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ মোঃ জামাল শিকদার সাননিউজকে বলেন, ঢাকা শহরে ভাড়াটিয়ারা বেশ অসহায়। এই লকডাউনে তাদের কথা কেউ ভাবছে না।
চলমান পরিস্থিতিতে বাড়ি ভাড়া সম্পূর্ণ মওকুফ না হলেও অন্তত ৪০ শতাংশ মওকুফের দাবি করেছে ভাড়াটিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ নামের অন্য একটি সংগঠন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাড়ি ভাড়া সম্পূর্ণ মওকুফ চাওয়া হচ্ছে না; অন্তত ৪০ শতাংশ মওকুফ করলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। এতে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া উভয়ের বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলা করা সম্ভব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লকডাউন শুরু পর অনেকেই ঢাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। লকডাউন বাড়লে আরও অনেক পরিবার গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হবেন।
লকডউন শুরুর পর গ্রামে বাড়ি চলে গেছেন এমন একজন চাঁন মিয়া। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে তিনি হকারি করতেন। ৫ এপ্রিলের পর থেকে মূলত তার ব্যবসা বন্ধ। আয় বন্ধ হওয়ায় বাসা ভাড়া দিতে পারছিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামে চলে গেছেন।
সাননিউজকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ঢাকায় থাকলেতো না খেয়ে মরতে হতো। গ্রামে এসে অন্তত বাসা ভাড়া দিতে হচ্ছে না।
একটি বেসরকারি অফিসের বিপণনে কাজ করতেন রাকিব হাসান। লকডাউন শুরুর পর কোম্পানি তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছে। বেতন ছাড়া ছুটিতে তিনি বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। সাননিউজকে তিনি বলেন, চলতি মাসের বাসা ভাড়া দিতে পারিনি। জানিনা বাসা মালিক কবে বের করে দেন।
সরকার বাড়িভাড়া মওকুফ করবে কিনা তা জানতে প্রতিদিনই পুলিশের ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা জানতে চাচ্ছেন, সরকার লকডাউনে বাড়িভাড়া মওকুফ করবে কিনা বা বাড়িভাড়া নিয়ে সরকার কোনো নির্দেশনা দিয়েছে কিনা।
৯৯৯ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গত ৪ দিনে তাদের কাছে গড়ে ৩০ হাজার করে ফোন আসছে। এরমধ্যে অধিকাংশই বাড়িভাড়া বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তারা জানাচ্ছেন, সরকার এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
সান নিউজ/আরএম/এম