নিজস্ব প্রতিনিধি: হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামসহ হেফাজত অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
একাধিক জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) গণামধ্যমে সতর্ক অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে সব এসপি ও রেঞ্জের ডিআইজিকে স্ব স্ব জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। কেউ যাতে কোনোভাবেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, মানুষ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এসপি বলেন, শনিবার রাত ও রোববার সকালে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের যেসব থানায় বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে, সেখানে ২৪ ঘণ্টা দুইজন পুলিশ সদস্যকে অন-গার্ড (বন্দুক তাক করে) থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সকালে যখন মামুনুল হককে গ্রেফতারের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, তখন মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রায় ২ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।
মামুনুল হককে বের করার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কায় এত বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হলেও তিনি স্বাভাবিকভাবেই বের হয়ে আসেন।
ঢাকার একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঢাকা পোস্টকে বলেন, থানাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া থানা এলাকার মাদরাসা ও মসজিদগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর মসজিদ ও মাদরাসাগুলোতে যাতে কেউ জড়ো হতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর তাকে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ডিসি হারুন-অর-রশিদ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আপাতত মোহাম্মদপুর থানার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অন্য মামলার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরে মামুনুলকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। সেখানে পুলিশের গুলিতে চার ছাত্রের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ হয়। সেখানেও সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়। হামলা ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৭ মার্চ বিক্ষোভ ও ২৮ মার্চ হরতাল পালন করে ইসলামী সংগঠনটি। হরতালে দেশব্যাপী হামলা, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
এসব ঘটনার এক সপ্তাহ পর ৩ এপ্রিল বিকেলে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
সেই সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল হক। এসময় হেফাজতকর্মীরা জড়ো হয়ে মামুলকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় এবং আশপাশের এলাকায় ভাঙচুর চালায়।
পরে মামুনুল হকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। মামলায় তার বিরুদ্ধে নাশকতার হুকুমদাতা, বিস্ফোরণের হুকুমদাতা এবং নিরীহ মানুষকে হত্যাচেষ্টার হুকুমদাতা বলা হয়েছে।
এছাড়া ‘দ্বিতীয় স্ত্রীকাণ্ডে’ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামুনুলের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নাশকতার অভিযোগেও মামলা আছে।
সাননিউজ/এএসএম