আসমাউল মুত্তাকিন, নিজস্ব প্রতিনিধি: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের আজ তৃতীয় দিনে গণপরিবহনশূন্য রাজধানী। অতি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদের ভরসা ব্যক্তিগত গাড়ি, সিনিএনজি অথবা রিকশা। এদিকে নগরীর অলিগলি ছাড়াও প্রধান সড়কে রয়েছে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট।
তবে বিপাকে পড়া নগরবাসীকে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রিকশাচালকদের বিরুদ্ধে। বাধ্য হয়ে যাত্রীরাও বেশি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে যাচ্ছেন। কাছের-দূরের সব দূরত্বের ভাড়াই বেড়েছে।
যাত্রীরা বলছেন, সব ক্ষেত্রেই তারা ভাড়া বেশি চাচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা পর্যন্ত চাচ্ছেন। উপায় না পেয়ে সে ভাড়াতেই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। আবার অনেকেই পায়ে হেঁটেও গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) কমলাপুর, মৌচাক, মগবাজার, রাজারবাগ ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন গন্তব্যে পায়ে হেঁটেই যেতে দেখা গেছে নাগরিকদের।
রাজধানীর মৌচাক থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য রিকশা চালকের সঙ্গে দরদাম করছিলেন মানিক হোসেন নামে এক যাত্রী।
রিকশা চালক আজিজ মিয়া মৌচাক ব্রিজ নিচ থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত ভাড়া চেয়েছেন ৬০ টাকা। আশেপাশের বাকি রিকশা চালকরাও একই দূরত্বে ৬০ টাকাই ভাড়া চাচ্ছিল। কেউ তাদের ভাড়া কমাচ্ছিলো না।
যাত্রী মানিক হোসেন বলেন, আগে স্বাভাবিক সময় এই ভাড়া ছিল সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। সবকিছু বন্ধ ও যাত্রীদের প্রয়োজনের সুযোগ বুঝে তারা হঠাৎ করেই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। দূরে, কাছে সব দূরত্বেই ভাড়া বেড়েছে। একজন একটা ভাড়া চাইলে আশেপাশের অন্যরাও একই ভাড়া চায়। দরদামের কোনো সুযোগ নেই।
মোবারক হোসেন নামে একজন বলেন, ‘বাসা থেকে বের হয়ে কোনো যানবাহন পাইনি। রিকশা ভাড়া চেয়েছে কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু অফিসে আসতেই হয়েছে। তাই হেঁটেই চলে এসেছি। ১ ঘণ্টার বেশি হাঁটতে হয়েছে।’
সাধারণ যাত্রীদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিধিনিষেধের সময় চলাচলকারী একাধিক রিকশা চালকের সঙ্গে কথা হয়। তারাও জানিয়েছেন ভাড়া কিছুটা বেশি চাওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কেউ কেউ দিচ্ছে, অনেকেই দিচ্ছে না।
তবে তারা দাবি করেছেন, লকডাউনের সময় তাদের জমা বেড়ে যায়। তাই তাদের অতিরিক্ত ভাড়া নিতে হয়।
কমলাপুরে থেকে মধ্যে মেীচাক পর্যন্ত ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রিকশা চালক আলী হোসেন সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্য কোনো গণপরিবহন চলাচল করছে না। আমরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছি। তাই অনেকে আগের চেয়ে কিছুটা বেশি ভাড়া চাচ্ছে। সব রাস্তায় তো আবার চলাচল করতে পারছি না। অনেক সময় আমাদের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সড়কে রিকশা উল্টিয়েও রাখা হচ্ছে। তারপরও নিজেদের পেটের কথা চিন্তা করে রাস্তায় বের হই।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রথম দফায় মানুষের চলাচল ও কার্যক্রমে বিধি-নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর গত ১৪ এপ্রিল (বুধবার) থেকে এক সপ্তাহের জন্য চলাচলে বিধি-নিষেধ তথা কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
সাননিউজ/এএসএম