নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার ঘোষিত ৭ দিনের লকডাউনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সীমিত পরিসরে চলছে ব্যাংক। তাই সড়কে গণপরিবহন না চললেও ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়মিত অফিস করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। একদিকে গণপরিবহন সঙ্কট অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষের সংস্পর্শে এসে কাজ করা। উভয় সঙ্কটে দিন কাটছে ব্যাংকারদের। এতে তীব্র স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন তারা।
জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার গত ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে। এ সময়ে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাষিত সকল প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি অফিসগুলোও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এমনকি সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে আমরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যাংকে যাতায়াত চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অফিসে যাওয়া-আসা ও ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পরিপালন করা কঠিন। সচেতনতার অভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই। এখন নতুন করে আরেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিধিনিষেধে সব বন্ধ। রিকশায় ও হেঁটে অফিসে আসতে হয় ও বাসায় যেতে হয়।
এনআরবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন, আমার অফিস থেকে বাসার দূরত্ব অনেক। অন্যান্য সময় বাসে যাতায়াত করতাম। এখন রিকশা বা পায়ে হেটেঁ যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে একদিকে খরচ বাড়ছে অন্যদিকে শরীরে আসছে ক্লান্তি। ফলে কাজের ক্ষতি হচ্ছে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, যাতায়াতের সমস্যাতো রয়েছেই। এরপর ব্যাংকে এসে শতশত গ্রাহককে সেবা দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কখন যে করোনা আক্রান্ত হয়ে যাই তা বলা মুশকিল।
রিকশাতেও ঝামেলাহীনভাবে অফিসে আসতে পারছেন না ব্যাংক এশিয়ার আবির হোসেন। তিনি বলেন, রিকশাতো আসতেই চায় না। কাউকে রাজি করানো গেলেও পথে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন (১৪ থেকে ২১ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন হবে। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এ খবরে অনেক ব্যাংকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেন।
একজন লিখেছেন, ব্যাংকাররা কি উড়ে যাবে অফিসে? গতবছর লকডাউনে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে পুলিশি হয়রানির শিকার হন ব্যাংকাররা। এইবারেও ব্যতিক্রম কিছু নয়।
আরেকজন লিখেছেন, লকডাউনে জরুরি সেবাদানকারী ব্যাংকারদের সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধা হিসাবে মর্যাদা ও প্রণোদনা দেওয়াসহ নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা উচিত।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের বিধিনিষেধের নির্দেশনায় প্রথমে ব্যাংক বন্ধ রাখার কথা বলেছিল। ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিধিনিষেধের চলাকালে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার কথা বলে। সেই আলোকে আমরা নতুন নির্দেশনা দিয়েছি। ‘ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন’ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে।
নতুন নির্দেশনায় যা আছে
সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন হবে। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত।
বিধি-নিষেধ চলাকালে ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়/প্রধান শাখাসহ সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখা ও জেলা সদরে অবস্থিত ব্যাংকের প্রধান শাখা খোলা রাখতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকাধীন প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি শাখা (এডি শাখা না থাকলে) খোলা রাখতে হবে। তাছাড়া, এ সময়ে উপজেলা পর্যায়ে কার্যরত প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা বৃহস্পতিবার, রোববার এবং মঙ্গলবার খোলা থাকবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিজ নিজ অফিসে আনা-নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাননিউজ/আরএম/বিএস