নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। প্রতিদিনই মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সারাদেশে নতুন করে যে ‘লকডাউন’ আরোপ করা হয়েছে সেটি কার্যকর হয়েছে আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল) ভোর থেকে। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক কৌতূহলী মানুষ বের হচ্ছেন। মূলত লকডাউন ঠিকমতো পালিত হচ্ছে কি না— সেটা দেখতে খুবই আগ্রহ নিয়ে তারা বাইরে ঢু মারছেন।
সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারিসহ সবধরনের অফিস, গণপরিবহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ থাকবে। মাঠ-পর্যায়ে বিষয়টি নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ প্রশাসন।
কেউ যেন অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা করতে না পারে সেজন্য রাজধানীজুড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের চেক পোস্ট। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের থানা ও ট্রাফিক বিভাগের সম্মিলিত টহলও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের মুভমেন্ট পাস ও জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কাউকে বাইরে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সরেজমিনে রাজধানীর মগবাজার,মেীচাক, কমলাপুর,কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নীলক্ষেতসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি পয়েন্টে বসানো হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ তল্লাশি চৌকি।
বাইরে বের হওয়া মানুষ, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চালকদের দেখাতে হচ্ছে মুভমেন্ট পাস। যারা অপ্রয়োজনে গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে মামলার।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর মাহফুজ আলম বলেন, অনেকেই অপ্রয়োজনে মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন। ‘কোথায় যাবেন’ অথবা ‘কী কারণে বের হয়েছেন’— এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে যারা পারছেন না আমরা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। এছাড়া প্রতিটি প্রাইভেটকার ও অন্যান্য গাড়িকে তল্লাশি চৌকি পার হয়ে গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে।
রাজধানীর বাজার ও জনবহুল স্থানগুলোতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের টহলও অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসনের কড়াকড়িতে মহাসড়কের পাশের দোকান বন্ধ থাকলেও এলাকাভিত্তিক গলির ভেতরের দোকানিদের নজর টহল পুলিশের দিকে।
পুলিশ দেখলেই তারা দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করছেন। পুলিশ চলে যাওয়ার পরপরই ফের দোকান খুলছেন। এছাড়া কাঁচাবাজার ও মাছ-মাংসের বাজারে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সেলিম খান বাসা থেকে বেরিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। হাতে বাজারের ব্যাগ থাকলেও মুখে ছিল না মাস্ক। জিজ্ঞাসা করতেই অনেকটা বিরক্ত হয়ে বললেন, খেয়াল ছিল না।
মগবাজারে কথা হয় রহিম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে বাজারে কী অবস্থা সেটা দেখতে এসেছি। কিছুক্ষণ পর এসে বাজার করে নিয়ে যাব।’
এছাড়া নীলক্ষেতে পুলিশের টহল টিমের প্রশ্নোত্তরের সদুত্তর দিতে পারছিলেন না বাইরে বের হওয়া অধিকাংশ মানুষ।
শের-ই-বাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানে আলম মুন্সী বলেন, ‘অপ্রয়োজনে কেউ যেন বাইরে চলাফেরা করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট এবং মোবাইল ডিউটি করছি। এরই মধ্যে জনগণের কাছে আমরা এই বার্তাটি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি, জনসমাগম এড়িয়ে প্রয়োজনীয় কারণ ছাড়া বাইরে বের না হলে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে। আমরা মাঠে রয়েছি, যারা বাইরে বের হবেন মুভমেন্ট পাস নিয়ে যথাযথ কারণ উল্লেখ করে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে বিষয়টি কর্মরত পুলিশ সদস্যদের অবহিত করবেন।’
সাননিউজ/এএসএম