তারেক সালমান : ষাট বছরেরও বেশি সময় আগে একটি পরিবারের উদ্যোগে প্রায় সাড়ে আট একর জমির ওপর নির্মিত মসজিদ বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশের মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদার স্থান। মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে মক্কার পবিত্র কাবা ঘরের আদলে চারকোনা আকৃতিতে।
পুরোনো এবং নতুন ঢাকার মিলনস্থল পল্টন এলাকায় এই মসজিদে একসঙ্গে চল্লিশ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
দেশের বৃহত্তম এই মসজিদের ইতিহাস এবং গুরুত্ব নিয়ে অনেক বইও প্রকাশিত হয়েছে।
পাকিস্তান আমলে ঢাকায় বড় শিল্প উদ্যোক্তা বাওয়ানী পরিবারের পক্ষ থেকে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। বাওয়ানী জুট মিলসের মালিক উর্দূভাষী আব্দুল লতিফ বাওয়ানী এবং তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানী ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদ সোসাইটি' গঠন করে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নেন ১৯৫৯ সালে।
ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকা কোষ-এ বলা হয়েছে, ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি আব্দুল লতিফ বাওয়ানী মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দুই বছর পর ১৯৬২ সালে মসজিদ নির্মাণের কাজ মোটামুটি শেষ হয়। তবে পুরো কাজ শেষ হয় ১৯৬৮ সালে।
বায়তুল মোকাররমের নকশা করেছেন পাকিস্তানের সিন্ধুর একজন স্থপতি এএইচ থারানী।
প্রায় সাড়ে আট একর জমির ওপর এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সেই ষাটের দশকের শুরুতে এই জায়গা অধিগ্রহণ করার পর যখন মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়, তখন সেখানে একটি বড় পুকুরও ছিল। সেটা পল্টন পুকুর নামে পরিচিত ছিল। পুকুরটি ভরাট করার পর মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
যে কারণে পল্টনে এই মসজিদ
বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মিত হয়েছে পুরোনো ঢাকা এবং নতুন ঢাকার মিলনস্থলে।
লেখক ওসমান গণি বলেন, এই মসজিদ নির্মাণের অনেক আগে থেকেই নতুন ঢাকার সীমানা বাড়তে থাকে। ফলে পুরোনো ও নতুন-দুই ঢাকার মানুষের কথা এই জায়গা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় বিবেচনার বিষয় ছিল বলে তিনি মনে করেন।
ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, বায়তুল মোকাররমের ওই জায়গাটিকে তখন নগরীর কেন্দ্রস্থল হিসাবেও বিবেচনা করা হত। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা এমন ধারণা করেন।
বায়তুল মোকাররম মসজিদটি প্রথমে ত্রিশ হাজার মানুষের নামাজ আদায়ের সুযোগ রেখে নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে ২০০৮ সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে এর সম্প্রসারণ করা হয়। এর ফলে একসঙ্গে ৪০,০০০ মানুষের নামাজ আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মসজিদের মূল ভবনটি আটতলা, যা মাটি থেকে ৯৯ ফুট উঁচু। আটতলা এই মসজিদের নিচতলায় মার্কেট এবং গুদাম ঘর রয়েছে। বিশাল এই মসজিদটিতে আয়োজিত জুম্মা কিংবা ঈদের নামাজে এত ভিড় হয় যে বহু মানুষকে বাইরেও নামাজ পড়তে হয়। দোতলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়। আর খতিব বা ইমাম নামাজ পড়ান দোতলা থেকে।
তিনতলার উত্তরপাশে নারীদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। সেখানে একসঙ্গে ১৫০০ নারী নামাজ পড়তে পারেন। উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে মসজিদে প্রবেশ করা যায়।
বায়তুল মোকাররমের খতিব মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবারে জুম্মার নামাজে এই মসজিদে উপচে পড় ভিড় হয়। আর প্রতি ঈদে পাঁচটি করে জামাত হয় এবং প্রতি জামাতেই থাকে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণ।
তিনি জানান, দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটকও আসেন বায়তুল মোকাররম মসজিদ দেখার জন্য। বায়তুল মোকাররম মসজিদের নকশা বা স্থাপত্য শৈলীর মাঝে ভিন্ন ধরণের আকর্ষণ রয়েছে।
প্রথম রোজা থেকেই করা হয় ইফতারের আয়োজন। সরকারের ইসলামিক ফাউণ্ডেশন এই ইফতার আয়োজনের অর্থায়ন করে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদে সিনিয়র খতিব মিজানুর রহমান বলেছেন, রমজান মাসে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। ধনী, গরিব-সব শ্রেনির মানুষ এক সাথে বসে ইফতার করে থাকেন।
কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত বারের মতো এবারও ইফতারের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। শেষ দশ রোজায় শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজের জামাতের আয়োজনও করা হয়।
খতিব মিজানুর রহমান জানান, তাহাজ্জুদের নামাজেও অনেক মুসল্লী অংশ নেন।এগুলো সবই গত বছর থেকে সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে মহামারীর কারণে।
প্রতি ঈদে কয়েকটি জামাতে বায়তুল মোকাররমে লাখও মানুষ নামাজ পড়েন।
সাননিউজ/টিএস/এম