নিজস্ব প্রতিবেদক : রাস্তায় তীব্র যানজট। মানুষ জোর-জবরদস্তি করে উঠছে বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে। উদ্দেশ্য একটাই করোনায় বাড়ি ফেরা। কোথাও কোথাও বাসের বন্ধ দরজা জোরপূর্বক খুলতে বাধ্য করা হচ্ছে হেলপারদের। স্টপেজগুলোতে যাত্রীদের অপেক্ষার সাথে দীর্ঘ হচ্ছে লাইনও। সব যাত্রীরাই সাধ্যমতো বহন করছেন একাধিক বড় বড় ব্যাগ। কেউ একা তো কেউ পুরো পরিবার নিয়ে লড়ছেন বাসে ওঠার যুদ্ধে। এ যেন সাধারণ কোনো যাত্রা নয়। শহর ছেড়ে প্রাণপণে পলায়নের সর্বাত্মক যাত্রা। সকাল থেকে রাজধানী শহরের ভেতরের বাস স্টপেজগুলোর দৃশ্যপট ছিলো এমনই। বিকেল হতেই আরও ব্যতিক্রম দৃশ্য চোখে পড়ে নগরীর সীমান্তবর্তী বাসস্ট্যান্ড গাবতলী এলাকায়।
গাবতলীতে ঘরমুখো যুবক তারেকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঢাকায় আমি একটা দোকানে সেলসম্যানের কাজ করি। কাল থেকে মার্কেট বন্ধ হয়ে যাবে। তাই গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আজই ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকাল ১১টায় বের হয়ে এলিফেন্ট রোড থেকে গাবতলী এসেছি দুপুর দেড়টায়। তখন থেকে ঢাকা ছাড়ার গাড়ি খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না।
কোনো গাড়িই তো চালু নেই, যাবেন কিভাবে তাহলে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাস না যাক। অনেক কিছুতে করেই যাচ্ছে মানুষ। আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ, আমি ঢাকা থেকে বের হতে পারলেই ভেঙে ভেঙে যেতে পারবো।
একপর্যায়ে সাংবাদিক বুঝতে পেরে এড়িয়ে যান তিনি। তবে গাবতলী এলাকা ঘুরে তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়। পিকআপ, মিনি পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও প্রাইভেটকারসহ নানা বাহনে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। তবে একটু ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চড়া দাম দিয়ে।
বাড়িমুখো চল্লিশোর্ধ্ব রাবেয়া এক পিকআপের হেলপারের সাথে কথা বলা শেষ করে হেঁটে ব্রিজ পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই পারে গিয়া গাড়িত উঠুম। এই পারে টেরাকে (ট্রাকে) উঠলে টেরাফিক (ট্রাফিক) পুলিশ ধরব।
কোথায় যাবেন আর কত টাকায় যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে, হাতের বস্তা টেনে নিতে নিতে টানা টানা সুরে তিনি জবাব দিলেন, যামু টাঙ্গাইল। গাড়িও সেহানেই যাইবো। সবার থাইকা না কি সাত, আটশ টেহা নেয়। আমি মুরুব্বী মানুষ বইলা ৪০০ টাহায় রাজি হইছে। লগে একটা নাতি আছে তার জন্য দেওন লাগব ২০০ টাহা!
গাবতলী ব্রিজ পার হয়ে আমীনবাজার বাসস্ট্যান্ডের আগে গেলেই দেখা মেলে বাস্তব চিত্র। পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, মিনি পিকআপ ভরে ভরে বিশেষ কায়দায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নানা নিরাপত্তা ঝুঁকি উপেক্ষা করে নিম্নআয়ের এসব মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন।
একটু সচ্ছল যারা তারা যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে। এক্ষেত্রে অবশ্য তারা ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকেই যাত্রা শুরু করতে পারছেন। তবে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ও মাজার রোড এলাকা থেকে তাৎক্ষণিক এসব পরিবহন ভাড়া করেও যাচ্ছেন অনেকেই। এমন একজন নূর হোসেন। তিনি তার মা ও বোনকে নিয়ে দিনাজপুর যাবেন। তাই এদিকে এসে একটি মাইক্রোবাসের সাথে কথা বলেছেন। তিনজনের জন্য সারে সাত হাজার টাকা ভাড়ায় দিনাজপুর পৌঁছে দেবে এমন কথা হয়েছে সেই মাইক্রোবাস চালকের সাথে। মোট সাতজন নিয়ে যাবে ওই মাইক্রোতে। প্রায় ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে মাইক্রোবাসটি ভাড়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পণ্যবাহী পরিবহন যাতে কোনোভাবে যাত্রীবাহী পরিবহনে রূপ না নিতে পারে। প্রয়োজনে জেলা পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। যেখানে অনিয়ম, সেখানে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
সান নিউজ/বিএস