নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘শিশুবক্তা’ নামে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলাটির এজাহার শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভুইয়া এজাহার গ্রহণ করেন এবং তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য আগামী ৩০ মে দিন ধার্য করেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
গত ৭ এপ্রিল (বুধবার) মো. আদনান শান্ত নামের এক ব্যক্তি মাওলানা রফিকুল ইসলামসহ পাঁচজনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
জানা যায়, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানি ইউটিউব এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছেন। দেশের সাধারণ মানুষ এসব বক্তব্যের কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বিভ্রান্ত হয়ে তারা দেশের সম্পত্তির ক্ষতি করছে।
এর আগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিত মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) গাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা শেষে তাকে গাছা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (এএসপি) ইমরান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জিএমপির গাছা থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলা শেষে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জিএমপির দক্ষিণ বিভাগের গাছা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আহসানুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে র্যাব মামলাটি করে। মামলায় অভিযোগে বলা হয়, তিনি আইন না মেনে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
এর আগে বুধবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পরিচিত ও ভক্তরা অভিযোগ করে আসছিলেন, মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলামকে নেত্রকোনার নিজ বাসা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া রফিকুল ইসলামও সর্বশেষ নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমাকে গুম করার চেষ্টা চলছে’।
এরপর দুপুরের দিকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানি র্যাবের নিরাপত্তায় রয়েছেন মর্মে নিশ্চিত হয়েছি। অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।’
এর আগে ৩ এপ্রিল (শনিবার) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে মাওলানা মামুনুল হকসহ এক নারীকে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। এতে মামুনুলের ‘দ্বিতীয় স্ত্রীর’ বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুক লাইভে এসে রফিকুল ইসলাম মাদানি মামুনুল হকের সমর্থনে কথা বলেন।
এছাড়াও ২৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের মোদিবিরোধী মিছিল থেকে এই ‘শিশুবক্তা’কে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। পরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওই দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ঘিরে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের একটি মিছিল রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা থেকে শুরু হয়। এতে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মিছিলটি মতিঝিলে যাওয়ার পর পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় রফিকুল ইসলামকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছিল।
রফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়, থাকেন গাজীপুরে। তিনি নেত্রকোনার পশ্চিম বিলাশপুর সাওতুল হেরা মাদরাসার পরিচালক। রফিকুল ইসলামের বয়স ২৬ বছর। অনেকেই তাকে ‘শিশুবক্তা’ হিসেবেও চেনেন। তবে নিজের নামের সঙ্গে ‘শিশুবক্তা’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি জানান তিনি নিজেই।
সান নিউজ/আরআই