নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সমাজের সব শ্রেণির নাগরিক নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে নাগরিক সমাজ। অপরদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, করোনার চেয়েও সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার প্রেক্ষাপটে করণীয় বিষয়ে নাগরিক শীর্ষক’ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল।
তিনি বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। করোনায় যত লোক মারা যাচ্ছে সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে তার চেয়ে বেশি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নজর করোনার মোকাবিলার চেয়ে ক্ষমতা রক্ষায়। প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, ভারত তার প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়ে ফেলে দেবে। আপনি এখন করোনা মোকাবিলার দিকে নজর না দিয়ে ক্ষমতা রক্ষার জন্য মানুষকে রাতের অন্ধকারে গ্রেফতার করছেন, রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। মনে রাখবেন ভারত আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না।
করোনার এ সময়ে সব মেডিকেল ইকুইপমেন্টের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, সরকারি লোকজনের তো কিছু কিনে খাওয়ার অভ্যাস নেই। তারা সব কিছু এমনি এমনি পেয়ে যান। এ জন্য এসব বিষয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনার অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিট অনুমোদন না দেওয়ায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৫ হাজার ভারতীয় তো কাজ করে ভিসা ছাড়া। অথচ এ দেশের সন্তান ড. বিজন কুমার শীল গত ৬ মাসেও ভিসা পাচ্ছে না। আমি এই নিয়ে তিন বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আমি তো কাজ করে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ভিসা হচ্ছে না।
বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন করা গেলে বর্তমান দামের ৪ ভাগের এক ভাগ দাম হবে উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আর এই গবেষণার জন্য বিজন কুমারের মতো লোকের দরকার। সরকার যদি তার পুরনো কথা ভুলে ড. ইউনুসকে অক্সফোর্ড পাঠায় তাহলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশে যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে সেটা আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু সরকার সে দিকে নজর না দিয়ে নরেন্দ্র মোদির আগমন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আর ব্যস্ত ছিল মোদিবিরোধী বিক্ষোভ কীভাবে দমাবে তা নিয়ে। আমরা এমন এক দেশে বসবাস করি যেখানে নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে। এদেশে আল্লাহর দয়ার ওপর চেয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখানে সরকারকে ট্যাক্স দিলেও সেবা পাওয়া যায় না।
সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, আগের মহামারিগুলো থেকে আমরা বোঝতে পেরেছি যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কতটা ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে সরকারের কোনো প্রস্তুতিই ছিল না। তাদের প্রস্তুতি হচ্ছে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ঢেউ আসবে না, আমরা করোনা চেয়ে শক্তিশালী এসব বলা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, বিশিষ্ট নাগরিকসহ সবার অংশগ্রহণে জাতীয় কমিটি গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহ্বান জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর। তিনি বলেন, মানুষ আপনাদের (সরকারের) কথা শুনে না। আপনার সত্য কথা বললেও মানুষ মনে করে মিথ্যা বলছেন। কারণ আপনারা তো ভোটে নির্বাচিত নয়। আর সব সময় আপনারা মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও তথ্য দিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে সেখানে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে পারবে না। এজন্য কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন। প্রয়োজনে সরকার কিছু চিকিৎসা ব্যয়ও বহন করতে পারে।
সাননিউজ/এমআর/