রাসেল মাহমুদ : গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের একটি দোকানে মাসিক ১১ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন আবদুল হালিম। থাকেন শনির আখড়া এলাকায়। প্রতিদিন লোকাল বাসে কর্মস্থলে যেতে-আসতে তার খরচ হয় ৩০ টাকা। তার হিসাবে মাসে প্রায় এক হাজার টাকা যাতায়াত খরচ হয়। এর উপর রয়েছে নিত্যপণ্যের চড়া দাম। সামান্য আয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোমতে জীবন নির্বাহ করছেন তিনি।
তার ভাষায়, 'আমি যে বেতন পাই তা দিয়ে কোনোভাবেই সংসার চলে না। মাস শেষে ঋণ করতে হয়। এখন সব কিছুর দাম বেশি। আবার বাসের ভাড়াও বাড়ছে। কাল থেকে ফের নতুন ভোগান্তি শুরু হচ্ছে।'
গণমাধ্যমকর্মী রাকিব হাসানও সামান্য বেতনে কাজ করেন। পেশাগত প্রয়োজনে প্রতিদিনই তাকে বাসসহ বিভিন্ন গণপরিবহন ব্যবহার করতে হয়। তাই গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ার খবরে চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
সাননিউজকে তিনি বলেন, যতো সমস্যা আমাদের। সরকার পরিবহন মালিকদের কথা চিন্তা করে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দিলো। এর উপর আবার চাল, তেল, মাস-মাংসসহ সকল পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এ অবস্থায় আমরা যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের কী হবে? আমাদের আয়তো বাড়ছে না। মহা দুশ্চিন্তায় আছি ভাই।
শুধু আবদুল হালিম বা রাকিব হাসান নন; গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে স্বল্প আয়ের প্রায় সকল মানুষের। ক্ষোভও দেখা গেছে অনেকের মধ্যে। বলছেন, নানামুখী সংকট শুধু সাধারণ মানুষেরই।
জানা গেছে, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এরমধ্যে গণপরিবহনে যাত্রী ধারন ক্ষমতার অর্ধেক নিতে হবে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মালিকপক্ষ ভাড়া বাড়ানোর দাবি করে। সরকার সে দাবি মেনে ৬০ শতাংশ বাড়ায়। যা আগামীকাল বুধবার থেকে কার্যকর হবে।
বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাড়া আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। এসময় তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে এবং শতভাগ মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এই বিষয়ে গণপরিবহন মালিক শ্রমিকদের কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস ও কারখানায় অর্ধেক জনবল দিয়ে পরিচালনা এবং উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা, এমনকি জনসমাগম সীমিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের যেকোনো কার্যক্রম বাইরে করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে ঘরোয়াভাবে কার্যক্রম পালনের আহবান জানান তিনি।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতি বৃদ্ধি আর মাহে রমজানকে সামনে রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্যের দামই ঊর্দ্ধমুখি রয়েছে। এতে নিন্ম ও মধ্যবিত্ত মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
সাধারণ মানুষ বলছে, করোনা শুরুর দিকে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের বড় একটি অংশ বেতনের ৫০ বা ৬০ শতাংশ পাচ্ছেন। অনেকেই এখনো বেকার বসে রয়েছেন। নানা সংকটে দিনাতিপাত করছে তারা। এ অবস্থায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানো যেমন জরুরি, তেমনি গণপরিবহনের ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তও ঠিক নয়। এই সিদ্ধান্ত জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে।
যাত্রাবাড়ী আড়তে কথা হয় বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি সাননিউজকে বলেন, কাঁচাবাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় নিন্ম ও মধ্যবিত্ত মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। এমতাবস্থায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে সাধারণ মানুষ মারাত্মক সংকটে পড়তে পারে। এর উপর গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা সাধারণের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকায়। পাকিস্তানি কক বা সোনালি জাতের মুরগির দাম কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেড়ে ৩৫০-৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৬০-৫৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬২০ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা চিনির দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি খোলা চিনি কিনতে হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনির দাম আরও বেশি। এ সময়ে ভোজ্য তেলের দামও বেড়েছে।
সাননিউজ/আরএম/এম