মাহমুদুল আলম: মো. আফছার উদ্দিন খান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের (উত্তরা) কাউন্সিলর। যিনি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে জমা দেয়া হলফনামায় তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে এম.বি.এ। হলফনামা জমা দেয়ার সময় তিনি ফৌজদারি কোনো মামলায় অভিযুক্ত নন বলেও উল্লেখ করা হয়।
তার পেশার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিচালক: এম. এ. খান এন্ড কোম্পানী লি:, পরিচালক: ফ্রেসকো স্টিল মিলস লি:, মালিক: খান স্যানিটারী এন্ড টাইলস।
হলফনামায় তার এবং তার উপর নির্ভরশীলের (স্ত্রী সেলিনা আক্তার) আয়ের উৎস/উৎস সমূহে উল্লেখ করা হয়েছে বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া নিজের এক লাখ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা। ব্যবসায় নিজের এবং স্ত্রীর আয় যথাক্রমে ১২ লাখ পাঁচ হাজার ৮০০ এবং চার লাখ ৬৪ হাজার ৪১৩ টাকা।
শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত, পেশা থেকে তাদের উভয়ের আয়ের ঘরে ক্রস চিহ্ন দেয়া আছে। চাকরি/কাউন্সিলর হিসেবে সম্মানি ভাতা বাবদ তার আয় উল্লেখ করা হয়েছে সাত লাখ আট হাজার টাকা। পরিচালক হিসেবে সম্মানি ভাতা বিষয়ে উভয়ের ঘরে ক্রস চিহ্ন দেয়া আছে।
হলফনামায় তার নিজের এবং স্ত্রীর পরিসম্পন এবং আয়ের বিবরণীতে অস্থাবর সম্পদ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে নগদ টাকা আছে যথাক্রমে ৪০ লাখ এক হাজার ৬১৯ এবং ৮৩ লাখ ৫৮ হাজার। বৈদেশিক মুদ্রার ঘরে উভয়ের ক্ষেত্রে ক্রস চিহ্ন দেয়া আছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ যথাক্রমে ১৩ লাখ ৪৫ হাজার এবং ১০ লাখ ২২ হাজার টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জ তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ার (অর্জনকালীন মূল্য) নিজের তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় পত্রের বা স্থায়ী আমনতের বিনিয়োগ বিষয়ে উভরে ঘরে ক্রস চিহ্ন দেয়া আছে। বাস, ট্রাক, মটর ও মোটরসাইকেল ইত্যাদি বিষয়ে উভয়ের ঘরে ক্রস চিহ্ন দেয়া আছে। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলঙ্কারাদি নিজ নামে ১০ হাজার টাকা (অর্জনকালীন মূল্য) এবং স্ত্রীর নামে ৫০ তোলা স্বর্ণ উল্লেখ করা হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী (অর্জনকালীন মূল্য) যথাক্রমে এক লাখ ও তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। আসবাবপত্র যথাক্রমে এক লাখ ১০ হাজার ও চার লাখ ৮০ হাজার টাকা।
আর স্থাবর সম্পদের হিসেবে অকৃষি জমি তার নিজ নামে ৪৩.৭৬৫ শতাংশ উল্লেখ করেছেন তিনি। আর স্ত্রীর ঘরে ক্রস চিহ্ন দেয়া আছে। দালান, আবাসিক বাণিজ্যিক সংস্থা বিষয়ে নিজের ও স্ত্রীরসহ সব ঘরে ক্রস চিহ্ন দেয়া আছে। বাড়ি/এপার্টমেন্ট সংখ্যার বিষয়ে নিজের ও স্ত্রীর ঘরেও ক্রস দেয়া আছে। তবে যৌথ মালিকানার ঘরে ‘৬ষ্ঠ তলা বাড়ি’ লেখা আছে। আর যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে প্রার্থীর অংশ উল্লেখ করা আছে ‘৩ কাঠা ভূমি ও ৬ষ্ঠ তলা বাড়ির এক-চতুর্থাংশ’।
দায়-দেনা বিষয়ে উল্লেখ করা আছে গৃহ নির্মাণ ঋণ পরিশোধিত।
২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই হলফনামায় স্বাক্ষর করেন মো. আফছার উদ্দিন খান। ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী আবুল কালাম শিকদারের মাধ্যমে তিনি শনাক্ত হন উল্লেখ করে একই দিন হলফনামায় স্বাক্ষর করেন আইনজীবী (নোটারী পাবলিক) মো. মোশাররফ হোসেন চৌধুরী।
তবে এর মাস দুয়েক আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কালো তালিকায় আছেন আফছার উদ্দিন খান। চলমান মহামারি করোনার আগে হওয়া ক্যাসিনো অভিযানের সময় ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনিসহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর। তাদের সম্পদের হিসাব ও নানা অপকর্মের বিস্তারিত তথ্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। গ্রেফতারের তালিকাতেও নাম রয়েছে তাদের। যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন এসব কাউন্সিলররা। তাই আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তরা ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফছার উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে রাজউকের ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্লটে মার্কেট বানানো, দখলবাজি, ফুটপাত ও পরিবহন চাঁদাবাজিসহ জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে। গত দশ বছরে শুন্য থেকে এ কাউন্সিলর হাজার কোটি টাকার মালিক। উত্তরার তিনটি ক্যাসিনো কারবারের সাথে আফছার উদ্দিনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হল, উত্তরা ৯ নং সেক্টরের ভিবা চাইনিজ রেস্তোরাঁর উপরের তলার ক্যাসিনো, হাউজ বিল্ডিং গাজীপুর ক্লাব ক্যাসিনো ও ১ নং সেক্টরের পূবালী ব্যাংকে উপরে পরিচালিত ক্যাসিনো।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্থানীয় এমপি (তৎকালীন) আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুনের ভাগ্নে ও পিএস মজিবর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পুরো উত্তরার সকল বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ করেন আফছার। আফছারের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে, আব্দুল্লাহপুরে খন্দকার সিএনজি স্টেশনটি ১০ কোটি টাকায় ক্রয়, উত্তরায় ১০ কাটার উপরের ১২তলা খান টাওয়ার আশুলিয়ায় একই সাথে প্রায় ৫০ বিঘা জমি, আশুলিয়া ও রপ্তানি রোডে একটি পেট্রোল পাম্প।
প্রতিবেদন প্রকাশের কিছুদিন আগের ঘটনা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম উত্তরার একটি ফুটপাতের সামনে গাড়ি থেকে নেমে হকারদের জিজ্ঞেস করেন কার আশ্রয়ে তারা ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন। তারা সবাই উত্তর দেন কাউন্সিলর আফছার উদ্দিন খানের নাম। আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর আফছার উদ্দিন সে সময় মেয়রের সঙ্গেই ছিলেন।
সান নিউজ/আরআই