মোহাম্মদ রুবেল: ৫০শে বাংলাদেশ। আজ ২৬ মার্চ সেই দিন। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যেদিন থেকে চিরকালের জন্য পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হলো। সুবর্ণজয়ন্তী,স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে পূর্ণ হলো স্বাধীনতা ঘোষণার অর্ধশত বছর। যা বাঙালি জাতির ইতিহাসে এটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন আনন্দঘন এক গৌরব অনুভূতি। তাই বাঙালি জাতী উচ্ছ্বাস.এবং বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার প্রকাশ করছে জাতি।
আজ থেকে ৪৯ বছর পূর্বে মুক্তিকামী তৃষ্ণার্ত স্বাধীন পাগল বাঙ্গালীর জন্য বাংলার স্বাধীনতার ধ্রুবতারা, রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর শেখ মজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ৭ কোটি বাঙালিকে মুক্তি ও স্বাধীনতার অভয় বাণী শুনালেন ।
তিনি বললেন,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবা। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরেদেব, তবুও এদেশের মানুষকে মুক্তি করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। স্বাধীনতার অভয় বাণীর প্রতিটি শব্দছিল বাঙ্গালী জাতির আত্মা। সৃষ্টি হয়েছিল প্রতিটি শব্দে শব্দে দীর্ঘদিনের শোষণ আর বঞ্চনার ইতিহাস। শব্দের ছন্দে ছন্দে তিনি মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার কথাও বলে গেলেন। পরিস্ফুট হয়ে উঠলো মুক্তিকামী স্বাধীনতার ইতিহাস। সেই থেকে বাঙ্গালী হ্রদয়ে গেথে যায় স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।
তাইতো কবি নির্মলেন্দু গুণও কবিতায় লিখলেন, একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য কি দারুণ অপেক্ষা আর উত্তেজনা নিয়ে/ লক্ষ লক্ষ উন্মক্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে/ ‘কখন আসবে কবি’?/ ...শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/ রবীন্দ্রনাথের মত দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন/.... কে রোধে তাহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর-কবিতাখানি/ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। /সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।
বাংলা, বাঙালি ও বঙ্গবন্ধু একই বৃত্তে তিনটি চেতনার ফুল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে গরিব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর একমাত্র লক্ষ্য। তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া, শত যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট-বেদনাকে সহ্য করে বাংলার কৃষক-শ্রমিক জনতার মুখে হাসি ফোটাতে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন।
তাইতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ই মার্চ থেকে মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে দশ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। একই সঙ্গে বাঙালি জাতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় দেশমাতৃকার জন্য আত্মদান করা বীর সন্তানদের স্মরণ করছে।
এ প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়মী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করাহয়।
এছাড়া মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জুম্মা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে।
বিকেল ৩.৩০ মি. জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ আয়োজিত কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর পক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টুঙ্গীপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করাহয়।
২৮ মার্চ ২০২১ রবিবার সকাল ১১টা : আলোচনা সভা। আওয়ামী লীগ-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কার্যালয়ে।এতে সভাপতিত্ব করবেন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন।
সেই ২৫ মার্চ ভয়াল রাত। যে রাতের সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস আষ্ঠেপিষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবস পালন প্রাক্কালে এই কালরাতটিও স্বরণে আসে জাতির।স্বাধীনতা অর্জনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগিয়েছিল এদিনটি। এ প্রেক্ষিতে জাতির জীবনে অনন্য সাধারণ একটি দিন স্বাধীনতা দিবস।
এ ভয়াল কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। জেনারেল টিক্কা খানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিত পন্থায় বাঙালি হত্যার মহোৎসবে মেতে উঠেছিল। তারপরক্ষণেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতারেরর আগমুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
সে প্রেক্ষিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চলতে থাকে ৯ মাস ধরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা। বাঙালি জাতি রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তি যুদ্ধ চালিয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে প্রতিষ্ঠা পায় বাংলার ধ্রুবতারা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণে বলা হয়, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানী জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানী সেনারা কুখ্যাত অপারেশন সার্চলাইট নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালী বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
এদিন মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।
সান নিউজ/এমআর/