নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর শোকার্ত বাঙালি কিন্তু মোটেও ভেঙে পড়েনি; বরং উল্টোটা ঘটেছিল। শোক পরিণত হয়েছে শক্তিতে; পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীকে রুখে দাঁড়ানোর দৃপ্ততা এনে দিয়েছে; স্বাধীনতার তৃষ্ণা হয়েছে প্রবলতর; স্বজনহারানোর তীব্র ব্যথা তীব্রতর প্রত্যাঘাতের নেশায় রক্তে বাণ তুলেছে।
শুক্রবার ২৬ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস; আমাদের জাতীয় দিবস। যারা দেশের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে যুদ্ধ করেছেন একাত্তরে, সেসব বীর যোদ্ধাদের আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে জাতি। এবারের স্বাধীনতা দিবসকে বিশেষ তাৎপর্যময় করে তুলেছে এর সুবর্ণজয়ন্তী।
মহান স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুরো রাজধানী সেজে উঠেছে লাল সবুজ আলোক-সজ্জায়। সরকারি ভবন, বিভিন্ন সড়ক ও এর দ্বীপগুলো সাজিয়ে তোলা হয়েছে জাতীয় পতাকায়। সঙ্গে শোভা পাচ্ছে বর্ণিল আলোর ছটাও।
২৫ মার্চ রাতে নৃশংস গণহত্যার শিকার পূর্ব বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৯ মাস ধরে চলা প্রাণক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্বের মানচিত্রে উদয় হয় নতুন এক রাষ্ট্র- স্বাধীন ও সার্বভৌম ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে ওড়ে লাল সবুজের বিজয় নিশান। রক্ত খচিত সেই ইতিহাসের অমোচনীয় একটি দিবস আজ।
একটি একটি করে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০টি বছর পার করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার অর্ধশতকে এ অন্য এক বাংলাদেশ। স্বনির্ভর এক জাতি। এই বাংলাদেশ, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্ব নেতাদের কারও কারও মতে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ‘তেজি ষাঁড়, কারও মতে, ‘উন্নয়নের রোল মডেল, কারও মতে, অফুরন্ত সম্ভাবনার এক দেশ।
এ সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে এবার বিশেষ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানস্থলে বিকাল ৪টায় বক্তব্য দেবেন তিনি।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে।
জাতীয় সংসদকে পরিণত করতে হবে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ জন্য সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এ বছর জাতি উদযাপন করছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষে দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
ঐতিহাসিক এই দিনে তিনি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।
এর পর দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতি অর্জন করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি স্বাধীনতা পেয়েছে। এ ছাড়া তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক, বিদেশি বন্ধু এবং সব স্তরের জনগণকে, যারা জনগণের অধিকার আদায় ও মুক্তিসংগ্রামে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন।
আবদুল হামিদ বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ মহান স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু সব সময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লৈঙ্গিক বৈষম্য দূরীকরণ, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্যের হার কমছে। এক দশকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান।
মেট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলি টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোই নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির চিরন্তন প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার মুজিববর্ষের সময়সীমা এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের এই সন্ধিক্ষণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হোক মহান স্বাধীনতা দিবসে এ আমার প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দেওয়া বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বীর বাঙালি মাত্র ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে। আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি দেশে-বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ। এ অর্জনকে অর্থবহ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, মহান স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে। এটা আমাদের জন্য এক বিশাল অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন ২৬ মার্চ। এদিন পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। এর পর প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানান জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ বীর এবং যুদ্ধ চলাকালে সম্ভ্রম হারানো ২ লাখ মা-বোনের প্রতি; সম্মান জানান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে।
যারা স্বজন হারিয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব বন্ধু রাষ্ট্র, সংগঠন ও বক্তি, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের চূড়ান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করেন। ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামের তালিকাও একই সঙ্গে প্রকাশ করা হয়।
অনেক প্রাপ্তি নিয়েও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবার উদযাপিত হবে অন্য রকমভাবে। এমন একটি সময়ে উদযাপন হবে, যখন করোনা ভাইরাসের থাবায় নীল হয়ে গেছে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব। এর মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।
গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ অনুষ্ঠান। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি অতিথিরা অংশগ্রহণ করেছেন। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠানে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ অনুষ্ঠানে নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি, ২৪ মার্চ অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং উপস্থিত ছিলেন।
২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকার কথা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতি মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিনের কর্মসূচি। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে।
একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এ ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র তৃতীয় খণ্ডে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের এ ঘোষণা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয় ২৫ মার্চ মধ্য রাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি। যা তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করও। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টসে ওই ঘোষণার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল। ঘোষণায় বলা হয়, ‘এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান-যতদিন না দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’ স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও পৃথকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করবে। আজ সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
সকাল ৭টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের অব্যবহিত পর)। সকাল ৮টায় ধানমন্ডি বত্রিশস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবে।
এ ছাড়া মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ মার্চ রবিবার বেলা ১১টায় রয়েছে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনাসভা। রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনাসভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এমপি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।
সান নিউজ/এসএ