মাহমুদুল আলম : ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম অনুসারে দেশের প্রথম ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি। অথচ খোদ বঙ্গভবনের ওয়েবসাইটেই সাবেক রাষ্ট্রপতিদের নামের বানানে দেখা যাচ্ছে ভুলভাল বানান।
‘সাবেক রাষ্ট্রপতিগণ (সূত্র: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ)’ শিরোনামের এই তালিকায় যেমন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের নাম দুই মেয়াদে চার রকম বানান দেখা যাচ্ছে। প্রথম মেয়াদে (১১-১২-১৯৮৩ থেকে ২৩-১০-১৯৮৬) লেখা আছে ‘লে: জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ, এন ডি সি, পি এস সি’। পরের মেয়াদে (২৩-১০-১৯৮৬ থেকে ০৬-১২-১৯৯০) লেখা আছে ‘জনাব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ’।
অর্থ্যৎ প্রথম মেয়াদে লেখা হয়েছে ‘হোসেন’, আর পরের মেয়াদে লেখা হয়েছে ‘হুসেইন’। আবার প্রথম মেয়াদে লেখা হয়েছে ‘মোহাম্মদ’, আর পরের মেয়াদে লেখা হয়েছে ‘মুহম্মদ’। তাছাড়া একবার নামের শুরুতে ‘লে: জেনারেল’ এবং শেষে ‘এন ডি সি, পি এস সি’ লেখা আছে, পরের বার নাই।
একইভাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের নামের বানান এক মেয়াদে (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, ০৬-১২-১৯৯০ থেকে ০৯-১০-১৯৯১) লেখা হয়েছে ‘সাহাবুদ্দিন আহমদ’। আবার পরের মেয়াদে লেখা হয়েছে, ‘সাহাবুদ্দীন আহমদ’। অর্থ্যাৎ প্রথমবার ‘দ্দি’, আর পরের বার ‘দ্দী’ দেয়া আছে।
অবশ্য তালিকায় একাধিক মেয়াদে সাবেক যে রাষ্ট্রপতিদের নাম এসেছে তাদের নামের বানান মিলিয়ে দেখা গেলেও অন্যদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। তবে সাবেক রাষ্ট্রপতিদের এই তালিকায় ১৮ নম্বরে লেখা আছে ‘এ, কিউ, এম, বদরুদ্দোজা চৌধুরী’। কিন্তু জানতে চাইলে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির প্রেস সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলম সাননিউজকে জানিয়েছেন নামের বানানটি হবে ‘এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী’।
পরের মেয়াদে ১৯তম রাষ্ট্রপতির (রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত) নাম লেখা আছে ‘মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার’। অবশ্য জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটে সাবেক স্পিকারদের নামের তালিকায় তার নামের বানানে এক শব্দে ‘জমিরউদ্দিন’ লেখা আছে। তাছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে তার ছেলে মুহম্মদ নওশাদ জমিরের হলফনামাতেও পিতার নাম লেখা আছে ‘মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভুলগুলোর কোনও কোনওটি দেখে মনে হতে পারে এগুলো সাধারণ ভুল। কিন্তু মনে রাখতে হবে কারও নামের বানানেই ভুল করা ঠিক নয়। আর এই নামগুলোতো রাষ্ট্রপ্রধানদের। এখানে ভুল হলে রাষ্ট্রের সম্মানহানী হয়। তাছাড়া এখন তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতা অনেক বেড়েছে। এখন উচ্চ বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীও ওয়েবসাইটে ঢুকে অনেক তথ্য জানার জন্য। সেখানে এমন যেনতেন অবস্থা দেখলে দেশের ব্যাপারে তার শিশুমনে অবচেতন মনেই হীনমন্যতা তৈরি হতে পারে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে জমিরউদ্দিন সরকার সাননিউজকে বলেন, আমি ‘জমিরউদ্দিন’ এক শব্দেই লিখি। দু:খ লাগে, একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের নামের বানানে ভুল থাকবে! এটা আমার বিষয় তো নয়। এটা স্টেটের বিষয়।
তিনি বলেন, এই কাজগুলো দেখেন সেক্রেটারি। কিন্তু দায়িত্বে থাকা লোকটি যদি শিক্ষিত-সচেতন না হন, তাহলে কীভাবে হবে!
প্রসঙ্গক্রমে সাবেক রাষ্ট্রপতির তালিকার ৩ নম্বরে থাকা নামটির বানান ‘আবু সাঈদ চৈধুরী’ আছে, নজরে দিলে তিনি বলেন, এটিও ভুল হয়েছে। বানানটি হবে ‘চৌধুরী’।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আপনি বিষয়টি প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারির নজরে দিতে পারেন। তাহলে সংশোধন হতে পারে। কারণ প্রেস সেক্রেটারি প্রেসের লোক তো, শিক্ষিত হবেন।
ওয়েবসাইটের লিংকে যেতে ক্লিক করুন...
সান নিউজ/এম