নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিক্ষোভ ও কুশপুতুল পোড়ানোর কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে। এতে সাংবাদিক এবং ছাত্রজোটের নেতাকর্মীসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। হামলার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করেছেন ছাত্রজোটের নেতারা।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন ডাস চত্বরে এ হামলা হয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর সূচি নির্ধারিত রয়েছে।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করে বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। তবে সকাল থেকে রাজু ভাস্কর্য এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ছাত্রজোটের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী টিএসসি চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে আবার টিএসসি ফিরে এসে ডাসের সামনে নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল দাহ করতে থাকেন এবং ভারতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
ছাত্রজোটের নেতাদের অভিযোগ, এসময় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী কুশপুতুলের আগুন নেভানোর জন্য দূর থেকে পানি ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। জোটের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে ছাত্রলীগ সংঘবদ্ধ হয়ে আবারও তাদের ওপর হামলা চালায়, তখন দুই পক্ষই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ছাত্রলীগের কর্মীরা বাঁশ, লাঠি, হেলমেট, বেঞ্চ দিয়ে জোটের কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এছাড়া রাস্তার পাশের ডাবের দোকান থেকে ডাব ছিনিয়ে নিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা জোটের নেতাকর্মীদের দিকে নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে ছাত্রজোটের অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
হামলায় আহতরা হলেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি সাদিকুর রহমান সাদিক, ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তমা বর্মন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, কেন্দ্রীয় নেতা আসমানী আশা, ঢাবি শাখার নেতা মেঘমল্লার বসু, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার সভাপতি জাবির আহমেদ জুবেল প্রমুখ।
হামলায় মানবজমিন পত্রিকার ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ, দেশ রূপান্তরের রুবেল রশিদ, জুমা প্রেসের (যুক্তরাষ্ট্র) কাজী সালাউদ্দিন রাজু, ইউএনবির জাবেদ হাসনাইন চৌধুরী, ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক হিমুসহ ৭-৮ জন সাংবাদিকও আহত হন।
হামলায় আহত সাংবাদিক জীবন আহমেদ বলেন, ‘আমার ক্যামেরা লক্ষ্য করে হেলমেট দিয়ে আঘাত করা হয়। ক্যামেরা রক্ষা করতে গিয়ে বাম হাতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছি।’
ছাত্রজোটের একাধিক নেতা হামলায় নেতৃত্বদাতা হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার রাজ, এস এম হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমন খান জীবন, মিলন হোসেন, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান শান্ত, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফাহিম হাসান, এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ সাজুকে অভিযুক্ত করেন।
হামলার পর সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ নির্মম হামলা চালিয়েছে। আমরা মনে করি এই ধরনের হামলার বিচার হওয়া দরকার। হামলায় আমাদের অন্তত ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১২ থেকে ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।’
হামলার বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
তবে রাজু ভাস্কর্যে হামলা পরবর্তী (পূর্বঘোষিত ছাত্রলীগের আয়োজিত আনন্দ র্যালি ও সমাবেশ) সমাবেশে তিনি বলেন, ‘নামসর্বস্ব কিছু ছাত্র সংগঠন, যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২০ থেকে ৩০ জন নিয়ে এসে আন্দোলন করেন। যাদের প্রত্যেকের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের ওপর, এরা পাকিস্তানের কাছ থেকে টাকা এনে পাকিস্তানের রাজত্ব কায়েম করবেন, ষড়যন্ত্র করবেন, তা হতে দেয়া হবে না। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। যখন বাংলাদেশকে বিশ্ব নতুনভাবে চিনছে, তখন তাদের চুলকানি শুরু হয়ে গেছে। আজকে যখন আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় উপস্থিত হবেন, তার আগ মুহূর্তে তারা বিভিন্ন ধরনের চক্রান্ত শুরু করেছেন। চক্রান্ত করার কোনো সুযোগ তাদের দেব না।’
সান নিউজ/আরআই