নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামের একশ' বিঘা জমিতে তৈরি শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) ইমেইল বার্তায় গিনেস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে।
শনিবার (২০ মার্চ) বিকেলে শস্যচিত্রটি নিয়ে সান নিউজের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর শস্যচিত্রের একশ' বিঘা জমির ধান যাবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। তবে এর কিছু অংশ স্থানীয় কৃষক এবং এই প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা পাবেন।
নাছিম বলেন, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু একটি ভিন্ন মাত্রার অসাধারণ নান্দনিক কাজ। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্বজুড়ে অনন্য সম্মানের সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দুর্দান্ত, নান্দনিক এবং সবচেয়ে বড় কাজ। এ শিল্পকর্মের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর কাছে জাগ্রত করা হচ্ছে। এরমধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী জানবে বাঙালি বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞ নয়।
তিনি বলেন, ধান পাকলে আমরা শুধু ধানের শীষটুকু কেটে নেব এবং বাকি অংশগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। এর পর উৎপাদিত এই ফসল যাবে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে। অনেক আলোচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এই শিল্পকর্মটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়ার পাশাপাশি সারাদেশের কৃষকদের উজ্জীবিত করেছে। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু বিষয়টি দেশের কৃষকদের ধান চাষে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, আগে দেশে নানা ধরণের বিপর্যয় এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ ছিল। সেই পরিস্থিতি উত্তরণে দেশের কৃষকরাই বড় ভূমিকা পালন করেছেন। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী ৫০ বছরের মধ্যে দেশের জনসংখ্যা তিনগুণ বেড়ে যাবে। যেহেতু ধানই আমাদের প্রধান ফসল সুতরাং ধানের এই উৎপাদন ধরে রাখার জন্য আমরা কৃষকদের ধান চাষে অনুপ্রাণিত করতে চাই। বগুড়ায় শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু প্রকল্পটিও একটা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে কৃষকদের জন্য।
সূত্রে জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামের একশ' বিঘা জমিতে শস্য দিয়ে তৈরি চিত্রশস্য ক্ষেতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে স্থান পেয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। রেকর্ডসের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে গত ৯ মার্চ।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ তাদের অফিসিয়াল পেজে সেটা জানিয়ে দিয়েছে গত ১৬ মার্চ এবং পরের দিন অফিসিয়ালি জানিয়েছে একটি ভিডিও ওয়েবিনারের মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, মুজিববর্ষ উপলক্ষে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটে তুলতে গত ২৯ জানুয়ারি শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামে প্রায় একশ' বিঘা জমিতে চীন থেকে আনা ডিপ ভায়োলেট রঙের হাইব্রিড ও দেশের ডিপ গ্রিন ধানের চারা রোপণ করা হয়। এখন সেই চারাগুলো বড় হয়ে তাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দেখা যাচ্ছে।
শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে ন্যাশনাল অ্যাগ্রোকেয়ার ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিকৃতি তৈরির কাজ শুরু করে।
আয়োজকরা জানান, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান দিতে গত বছর থেকে কাজ শুরু হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন নারী শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পুরুষ শ্রমিক ছিলেন।
এ শস্যচিত্রের জন্য স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘা আট হাজার ৯শ' টাকা করে সাত মাসের জন্য লিজ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ফসল উত্তোলনের পর মে মাসের দিকে জমিগুলো ফেরত দেওয়া হবে।
সান নিউজ/এমআর/এসএস