নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় ২৭ প্রার্থী নির্বাচিত হচ্ছেন।
ইসি সূত্রে জানা যায়, সাধারণত দেখা যায়- কোনো নির্বাচনে একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী থাকে। নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। ফলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী না থাকলে নির্বাচন আইন অনুযায়ী সেক্ষেত্রে ইসির কিছু করার থাকে না। ফলে ওই প্রার্থীকেই বিনাপ্রতিদ্বন্ধিাতায় বিজয়ী করে ইসি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হানাহানি-মারামারি হচ্ছে। এতে অনেকের প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। এ কারণে হয়তো কেউ কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া নির্বাচন মানেই সহিংসতা।
অপরদিকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার সান নিউজ অনলাইন পোর্টালকে বলেছেন, প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী না থাকলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতেই পারে।
কিন্তু যদি প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় যেতে না পেরে নির্বাচন কমিশনকে জানান। সেই প্রেক্ষিতে ইসির পদক্ষেপ নেয়া অথবা যে বাধা দিচ্ছে তার প্রার্থিতাও বাতিল করার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। ফলে সিস্টেম অনুযায়ী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হচ্ছে। ক্ষমতা ব্যবহার না করে ইসি যদি তা পকেটে রেখে দেয় তাহলে ভবিষ্যতেও এর মাত্রা আরও বাড়বে।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া আইন পরিপন্থি কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল বলেন, ইসির হাতে বিদ্যমান যে আইনটা আছে, সেটাই তারা পরিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করুক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনের মাঠে কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই? তা ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। তা কি ইসি দেখছে? নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুষ্ঠ পরিবেশ তৈরি করা। তা কি করতে পারছে ইসি ? পারছে না, কারণ বিদ্যমান আইনটিই তারা ব্যবহার করতেই শেখেনি। ফলে সকল নির্বাচনই এখন ইচ্ছার ওপর হচ্ছে। নির্বাচন মানেই এখন এলাকার ক্ষমতাশালী লোকজনদের ইচ্ছা অনুযায়ী হবে। নির্বাচন কমিশনের এখানে কিছু করার নেই।
ইসি সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ১ হাজার ৭৫২ প্রার্থী। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৯ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি ১১টি রাজনৈতিক দলের ৬৫৩ প্রার্থী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত হয়েছেন। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল থাকলেও ইউপি নির্বাচনে ১১টি দল প্রার্থী দিয়েছে।
ইসি জানান, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে মোট ২০ হাজার ৫১৭ প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৭ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১ হাজার ৭৫২ জন। সদস্য পদে ১৪ হাজার ৪৩৫ জন এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্য পদে ৪ হাজার ৩০৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ১৮ মার্চ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয় ১৯ মার্চ। এরপর বাতিল বা বৈধ ঘোষণা করা মনোনয়নপত্রের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। এসব আপিল নিষ্পত্তি এবং ২৪ মার্চ প্রত্যাহারের শেষ তারিখের পর প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রতিবেদককে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম আরও বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত পূর্ব শর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা যা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। যাতে করে যে কেউ চাইলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু বরাবরই বর্তমান কমিশন তাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে।
সান নিউজ/এমআর/এসএস