নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিতে শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে গঠন করা হয়েছে ফোর্সেস গোল-২০৩০। গৃহীত এ পরিকল্পনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
বিমান বাহিনীতে মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এমআরসিএ) বা নানামুখী ভূমিকা পালনে সক্ষম যুদ্ধবিমান সংবলিত একাধিক স্কোয়াড্রন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। ভূমি ও সমুদ্রে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানে সক্ষম অত্যাধুনিক এসব যুদ্ধবিমান ক্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ধরনের ১৬টি যুদ্ধবিমান ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
এসব যুদ্ধবিমান ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম বছরেই এককালীন পরিশোধের জন্য প্রয়োজন হবে ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকার। এ অর্থ পরিশোধের বিষয়টি আসন্ন বাজেটে (২০২১-২২ অর্থবছর) অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে বিমান বাহিনীর সদর দফতর। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের একটি অনুলিপি অর্থ সচিবকেও পাঠানো হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং রাষ্ট্রের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পাশাপাশি ভূমি ও সমুদ্রে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানে সক্ষম অত্যাধুনিক এমআরসিএ যুদ্ধবিমান কেনা প্রয়োজন। প্রতিবেশী দেশে এগুলোর সমসাময়িক আরও আধুনিকমানের যুদ্ধবিমান রয়েছে।
ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আলোকে বিমান বাহিনীতে একাধিক এমআরসিএ স্কোয়াড্রন স্থাপনের বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে বিমান বাহিনীর বহরে একটি এমআরসিএ (মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান) স্কোয়াড্রন যুক্ত হয়, যা বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আরেকটি এমআরসিএ স্কোয়াড্রন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জঙ্গিবিমান ক্রয়ের বিষয়টি বর্তমানে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
এ ১৬টি উড়োজাহাজের প্রক্রিয়াধীন দরপত্রের কার্যক্রম এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের দেয়া প্রস্তাব পর্যালোচনার ভিত্তিতে বিমান বাহিনী জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী এ ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে জিটুজি পদ্ধতিতে। এমআরসিএ ক্রয়ের চুক্তি করতে হলে প্রথম বছর এককালীন পরিশোধের (ডাউন পেমেন্ট) জন্য আগামী অর্থবছরেই মোট মূল্যের ২৫ শতাংশ বা ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে বিমান বাহিনীর প্রস্তাবে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এরই মধ্যে ১৬টি অত্যাধুনিক মানের ওয়েস্টার্ন অরিজিন (পশ্চিমা দেশে নির্মিত) এমআরসিএ ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে এ ক্রয় কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রস্তাবিত এসব আকাশযান ক্রয় বেশ ব্যয়বহুল বিষয়।
এ কারণে বাহিনীর নিয়মিত বাজেট থেকে এগুলো কেনা হলে পরবর্তী সময়ে মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে বিমান বাহিনীর পরিচালন বাজেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে কিস্তি পরিশোধ, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সব ক্ষেত্রেই ঘাটতি থেকে যাবে।
তবে অর্থ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, বর্তমানে আগামী বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যদি এ ধরনের প্রস্তাব আসে, তাহলে বিষয়টিতে যেহেতু জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু জড়িত তাই এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।
প্রস্তাবে বিমান বাহিনীর বর্তমান সক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পেশাদারিত্ব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বহির্বিশ্বেও সমাদৃত। এ অর্জনে অর্থ ও প্রতিরক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অবদান অনস্বীকার্য।
ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীর ভাণ্ডারে জঙ্গি বিমানসহ প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে সর্বাধুনিক মডেলের পরিবহন ও পরিবহন প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ, বিভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার, উন্নত প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, আবহাওয়া রাডার, স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ভারী ও মাঝারি মানের মিসাইল ও গোলাবারুদ সামগ্রী।
এগুলোর অন্তর্ভুক্তি বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সক্ষম করে তুলেছে।
সান নিউজ/এসএ