সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক: দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে যশোরে হত্যাকাণ্ড দিবসের ২২ বছর পালন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সমাবেশ থেকে সংগঠনটি বিয়োগান্তক সেই ঘটনার পুনঃতদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে শনিবার (৬ মার্চ) বিকেলে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ আয়োজনে গানের সুরে, কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে ও নৃত্যে ছন্দে সেই ভয়াবহ ঘটনার প্রতি ধিক্কার জানানো হয়। যশোর হত্যাকাণ্ডে শহীদদের প্রতিকৃতি নিবেদন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি। বক্তাদের আলোচনায় ওই ঘটনার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্ত শাস্তির শাস্তির দাবি জানানো হয়। উচ্চারিত হয়েছে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে অশুরের বিরুদ্ধে সংস্কৃতির শাণিত চেতনাস্নাত লড়াইয়ের কথা।
সঙ্গীতের আশ্রয়ে শুরু হয় প্রতিবাদী এ সাংস্কৃতিক সমাবেশ। অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। শহীদদের স্মরণে সকলে মিলে গেয়ে শোনায়- ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে/ কত প্রাণ হলো বলিদান/ লেখা আছে অশ্রুজলে...’। পরের গানে উচ্চারিত হয় উদীচীর শিল্পীদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। গীত হয়- ‘যতবার ঝরবে আমাদের রক্ত/সংগ্রাম হবে ততববার...’। উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে গাওয়া হয় ‘মানুষ হ মানুষ হ/ আবার তোরা মানুষ হ...’ শীর্ষক সঙ্গীত। ভয়কে জয় করার প্রত্যয়ে শিল্পীরা পরিবেশন করেন- ‘ঝঞ্ঝা ঝড় মৃত্যু দুর্বিপাক/ ভয় যারা যারা পায়/ তাদের ছায়া দূর মিলাক...’ শিরোনামের গান।
এছাড়াও সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া হয় ‘কারা মোর ঘর ভেঙেছে স্মরণ আছে’ শীর্ষক সঙ্গীত। দলীয় সঙ্গীতের সঙ্গে ছিল একক কণ্ঠের গান। মায়েশা সুলতানা ঊর্বি গেয়ে শোনান ‘গোধূলির সাথে সন্ধ্যা যায়/ আবার সন্ধ্যা আসে’। গানের মতো নাচের পরিবেশনাতেও প্রকাশিত হয় প্রতিবাদী ভাষা। সেই সুবাদে ‘বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে’ গানের সুরে উপস্থাপিত হয় সমবেত নৃত্য। এছাড়াও সাংস্কৃতিক পর্বে পরিবেশিত হয় ‘রক্তাক্ত যশোর’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা। গ্রন্থনার পাশাপাশি প্রযোজনাটির পরিকল্পনায় ছিলেন বেলায়েত হোসেন।
প্রতিবাদী সঙ্গীত ও নৃত্য এবং আলোচনা অনুষ্ঠানে সাজানো এই আয়োজনে সংগঠনটির উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শিবানী ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে এতে বক্তৃতা করেন- সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, উদীচীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, ইকবালুল হক খান, উদীচী যশোর জেলা সংসদের সদস্য একরামুল কবির খান প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সহ সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।
আলোচনায় বক্তারা যশোর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, যশোর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের ব্যাপারে সরকার সীমাহীন অবহেলা দেখিয়েছে। বাইশ বছর পেরিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া থেমে আছে। উদীচীর বোমা হামলার সুষ্ঠু বিচার হলে হামলাকারীরা পরবর্তী সময়ে সংঘটিত একের পর এক বোমাহামলার সুযোগ পেতোনা। যশোর হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান পরবর্তী সময়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তার সুত্র ধরে দু’জনকে গ্রেফতার করার পর অজ্ঞাত কারনে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ২০০৮ সালের পর মামলাটির তদন্তের ভার সিআইডির হাতে ন্যস্ত হয়েছিল। কিন্তু আজ অবধি আমরা তদন্তের কোন অগ্রগতি দেখতে পাইনি।
সান নিউজ/আরআই