সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক: দেশের লেখক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন- মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর।
বুধবার (৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে বাদ জোহর জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধের এক সোচ্চার কণ্ঠ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক শাহীন রেজা নূর। তার পিতা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান- শাহীন রেজা নূর। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে যেন দেশে কবর দেয়া হয়। তার সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে তার মরদেহ দেশে আনা হয়। বুধবার সকালে কানাডা থেকে তার মরদেহে দেশে এসে পৌঁছায়।
এরপর, সকাল ৬টায় তার মরদেহ বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর আসাদ এভিনিউয়ের তার বাসায় নেয়া হয়। সেখানে তারা পরিবার ও অনুরাগীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরে মোহাম্মদপুর ইকবাল রোড মসজিদে সকাল ১০টায় তার প্রথম জানাজা হয়। জানাজা শেষে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেয়া হয় কেন্দ্রীয় মিনারে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয়। এসময় শাহীন রেজা নূরের মরদেহের পাশে ছিলেন তার স্ত্রী খুরশিদ জাহান ও দুই পুত্র।
শুরুতেই শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগ। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের নেতৃত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অসীম কুমার উকিল, বিপ্লব বড়ুয়া, মৃণাল কান্তি দাস, সায়েম খান প্রমুখ।
এরপর শ্রদ্ধা জানায় জাসদ (ইনু), প্রজন্ম ৭১, উদীচী, জাতীয় প্রেসক্লাব, গণ সংগীত সমন্বয় পরিষদ, র্যামন পাবলিশার্স, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগ, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, প্রেস ইনিস্টিউট বাংলাদেশ, কণ্ঠশীলন, সরকারি শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন মহাবদ্যিালয়, যশোর; গৌরব ৭১, উঠোন, ভিন্নধারা, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী, ঋষিজ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, বাংলাদেশ আবৃত্তি শিল্পী সংসদ প্রভৃতি সংগঠন।
এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, নারী নেত্রী মুশতারী শফী, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাংবাদিক আবেদ খান, প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, অধ্যাপক এম এম আকাশ, শিল্পী নিসার হোসেন, আসিফ মুনীর, শমী কায়সারসহ সর্বস্তরের মানুষ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আজ আমরা একজন নক্ষত্র হারালাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের একজন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে তিনি বিরাজ করেছেন আমাদের মাঝে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, শাহীন রেজা নূর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক ছিলেন। প্রজন্ম’৭১ গঠণ করে এ আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য তিনি মাঠের নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিরোধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সাহসের সাথে লড়াই করেছেন।
শাহীন রেজা নূরের বড় ছেলে সৌরভ রেজা বলেন, আব্বু দেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসতেন, তার পরিবারকে ভালোবাসতেন, তিনি পিতা হিসেবে আমার কাছে শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন।
মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর বলেন, প্রজন্ম’৭১ এর পথিকৃৎ ছিলেন শাহীন রেজা নূর। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সন্তানরা শাহীন ভাইকে অবলম্বন করে বেড়ে উঠেছে।
সান নিউজ/আরআই