সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক: কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ বলে অভিহিত করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সেই সঙ্গে সমাবেশ থেকে অবিলম্বে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক এই সংগঠনটি।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কথামালা, গান ও আবৃত্তি দিয়ে সাজানো ছিলো এই প্রতিবাদ সমাবেশ।
এতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, মুশতাক আহমেদের জামিনে সমাজ, রাষ্ট্র, দেশের জনগণের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা ছিলো না। কোনো লেখক দ্বারা অকল্যাণ হয়েছে, তার প্রমাণ নেই।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাধারণ জনগণের আইন নয়, এটি সুদখোর, দুর্নীতিবাজ, মাফিয়াদের আইন। এ আইন তৈরি হয়েছে বিরুদ্ধ মতকে দমন করতে। সাংবাদিকদের দমন করতে। লেখকদের দমন করতে।
উদীচীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রহমান খান, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ইকরাম হোসেন, মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রহিম, কংকন নাগ, রহমান মুফিজ প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা মনে করি, লেখক মুশতাককের এ মৃত্যু কখনোই স্বাভাবিক মৃত্যু নয়; এ হত্যা। আমরা মনে করি মুশতাক আহমেদ নির্যাতনের ফলে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। আমরা সঠিকভাবে তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যার বিচারের দাবি জানায়। তারা বলেন, বারবার জামিন চেয়েও মুশতাককে জামিন দেয়া হয়নি। অথচ, খুনের আসামিও দুদিনে পরেই জামিন পেয়ে যায়! এ নৈরাজ্য! এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং অন্যতম স্তম্ভ হলো- গণ মানুষের স্বাধীনভাবে এবং নিশঙ্কচে কথাবলার অধিকার। মত প্রকাশের অধিকার। সেই অধিকার ৫৭ ধারার মতো কালো আইনের মাধ্যমে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমরা এই নিবর্তনমূলক ডিজিটাল আইন মানি না। দ্রুত এই আইনের বাতি চাই।
সমাবেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেন-সুরাইয়া নাজনিন, শিল্পী আক্তার। প্রতিবাদী কবিতা পাঠ করেন বেলায়েত হোসেন ও মিজানুর রহমান সুমন।
এদিকে, এ প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একই স্থানে ‘ইতিহাস কথা কও’ শিরোনামের এক গীতিনাট্য পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এই ভূখন্ডের স্বাধীনতা এবং সাম্প্রদায়ীকথার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের কাহিনি অবলম্বনে এ গীতিনাট্যটি রচনা করেছেন-মাহামুদ সেলিম।
গীতিনাট্যে গানে-নাচে ও বর্ণনা আর গান, নাচ, আবৃত্তি আর অভিনয়ের মাধ্যমে উঠে আসে প্রাচীন বঙ্গ, সমতট, হরিকেল, রাঢ়, বরেন্দ্র প্রভৃতি জনপদ। পরবর্তীকালে বৃহৎ-বঙ্গসহ ভারতীয় উপমহাদেশের রাজা ও জমিদারদের ক্ষমতার লড়াই। ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায় নির্বেশেষে শান্তির জনপদ ছিল এই বাংলা। কিন্তু বেনিয়া ইংরেজ যখন রাজাসন দখল নিতে শুরু করল। তখন থেকে নষ্ট হলো রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বিভেদ। লাখো মানুষের চোখের জল, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নামে পাকিস্তানি শোষণ-শাসন। পরে অনেক লড়াই সংগ্রাম, লক্ষ প্রাণ আর সম্ভ্রমের দামে মুক্ত হলো পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে যখন ভয়াবহ আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যখন কেউ রাস্তায় নামার সাহস পাচ্ছিলো না, ঠিক সেই সময় উদীচী তার দায়িত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে পথে নামে। আর এ প্রতিবাদের অন্যতম হাতিয়ার ছিল ‘ইতিহাস কথা কও।
সান নিউজ/আরআই