মাহমুদুল আলম : ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার নববধু তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে করা মামলায় অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের উভয়ের ৯ বছর করে কারাদণ্ড হতে পার। ডিভোর্স পেপার ছাড়াই অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে এই মামলা করেন তাম্মির আগের স্বামী দাবি করা রাকিব হাসান।
রাকিবের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ইশরাত হাসান। জানতে চাইলে সাননিউজকে তিনি বলেন, অপরাধ প্রমাণিত হলে কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের অর্থদণ্ডও হবে। বিভিন্ন ধারায় তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। এগুলোতে সর্বোচ্চ সাজা আছে সাত বছরের কারাদণ্ড। এই অপরাধ প্রমাণিত হলে আমরা যে মানহানির মামলা করেছি, সেটিতেও দণ্ড দিতে পারেন আদালত। সেখানে শাস্তি হতে পারে দুই বছর। সাত বছর ও দুই বছর মিলে ৯ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তার।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী বলেন, যে কাজী বিয়ে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রি) করেছেন, তার জানার কথা নয় যে, তাদের বা তাদের মধ্যে কারও আগে বিয়ে হয়েছে। কারণ আগের বিয়ে নিবন্ধন যদি অন্য কাজী করে থাকেন, তা তো এই কাজী জানার কথা নয়।
তবে কোনও কোনও কাজী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আগের বিয়ে ব্যাক ডেটে তালাক নিবন্ধন করে নতুন বিয়ে নিবন্ধন করে থাকেন। সেটিও তো অপরাধ। নাসির-তাম্মির বিয়ের ক্ষেত্রেও তো তা হতে পারে।
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, মামলায় অনেক কিছুই উঠে আসতে পারে। সেখানে প্রয়োজন মনে করলে অন্য কাউকেও মামলার আওতায় আনা যাবে।
এসময় ভিন্ন একটি পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেন তিনি। আইনজীবী বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন ডিজিটালাইজ করার জন্য সম্প্রতি সরকারকে আমরা একটি লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। এই মামলার বাহিরে এটি ভিন্ন একটি পদক্ষেপ। তিনজন ভুক্তভোগীকে নিয়ে ঐ নোটিশ দেয়া হয়েছে। সেখানে বড় পরিসরে সমস্যাটির (ব্যাক ডেটে তালাক) সমাধান আসতে পারে।
প্রসঙ্গত, নাসির-তাম্মির বিরুদ্ধে করা মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে দণ্ডবিধির ৪৯৪/৪৯৭/৪৯৮ ও ৫০০ ধারায়। এ ধারাগুলোর সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড। তবে ৪৯৪/৪৯৭/৪৯৮ ধারার শাস্তি সাত বছরের সঙ্গে ৫০০ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর যুক্ত হলে তাদের ৯ বছর করে কারা ভোগ করতে হতে পারে।
ধারা : ৪৯৪। স্বামী বা স্ত্রীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিবাহকরণ
কোনো ব্যক্তি যদি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও এমন কোনো পরিস্থিতিতে বিবাহ করে, যে পরিস্থিতিতে স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় সংঘটিত বলে অনুরূপ বিষয়টি অবৈধ হয়েছে, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
ধারা : ৪৯৭। ব্যভিচার
কোনো ব্যক্তি যদি অপর কোনো ব্যক্তির স্ত্রী অথবা যাকে সে অন্য কোনো ব্যক্তির স্ত্রী বলে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ আছে এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে উক্ত অন্য ব্যক্তির সম্মতি ও সমর্থন ছাড়া এরূপ যৌনসঙ্গম করে যা নারী ধর্ষণের শামিল নয়, তবে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধের জন্য দোষী হবে এবং তাকে সাত বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত করা যাবে। অনুরূপ ক্ষেত্রে স্ত্রী ব্যক্তিটি দুষ্কর্মের সহায়তাকারী হিসেবে দণ্ডিত হবে না।
ধারা : ৪৯৮। কোনো বিবাহিতা নারীকে অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে প্রলুব্ধকরণ বা অপহরণ বা আটককরণ
কোনো ব্যক্তি যদি যে নারী অপর পুরুষের সঙ্গে বিবাহিতা এবং তা সে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে, এইরূপ নারীকে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ যৌনসঙ্গম করার উদ্দেশ্যে বিবাহিত পুরুষের নিকট থেকে বা সে পুরুষের স্বপক্ষে অপর যে ব্যক্তি সে নারীর তত্ত্বাবধায়ক সে ব্যক্তির নিকট থেকে অপহরণ বা প্রলুব্ধ করে নিয়ে যায় বা অনুরূপ কোনো নারীকে উপযুক্ত উদ্দেশ্যে গোপন বা আটক করে, তবে সে ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
ধারা : ৫০০। মানহানির শাস্তি
কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো ব্যক্তির মানহানি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ৩০ মার্চের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পি বি আই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদীর (রাকিব হাসান) সঙ্গে ১ নং আসামি তামিমা সুলতানার ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক ৩ লাখ এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে এবং রেজিস্ট্রি হয়।
বিয়ের পর থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন। তোবা হাসান নামে তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। যার বর্তমান বয়স ৮ বছর।
জানা যায়, তামিমা পেশায় একজন কেবিন ক্রু। তিনি সৌদি এয়ারলাইন্সে কর্মরত। চাকরির সুবাদে তিনি ২০২০ সালের ১০ মার্চ সৌদিতে যান। মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে সেখানেই অবস্থান করেন। এ সময় ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাকিবের সঙ্গে তার যোগাযোগ হতো।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, তামিমার সঙ্গে ২ নং আসামির (ক্রিকেটার নাসির) কথিত বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা বাদীর নজরে আসে। বাদী এ ধরনের ছবি দেখে হতবাক হয়ে যান। পরে পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ দেখে তিনি ঘটনার বিষয় নিশ্চিত হন।
সান নিউজ/এম