নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের সম্পর্কযুক্ত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যত্নবান হতে গণমাধ্যমকর্মীদের পরামর্শ দিলেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারিঃ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপন্ডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ-ইমক্যাব আয়োজিত বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি করোনা টিকা নিয়েও কিছু ভুল, অসত্য সংবাদ আমাদের দেশে এবং ভারতেরও কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশিত হয়েছে, যা দু’দেশের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির উপক্রম করেছে,পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলনে তা নিরসন হয়েছে। তাই ভুল, অসত্য কিম্বা তথ্যনির্ভর নয় এমন সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকুন।
ইমক্যাব সভাপতি বাসুদেব ধরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ। সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক হারুন হাবীব এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ।
ড. হাছান তার বক্তৃতায় গভীর কৃতজ্ঞতাভরে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত শুধু আমাদের সহায়তাই করেনি, আমাদের মুক্তিকামী মানুষের সাথে ভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধ করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্যদের রক্তও মিশে আছে এবং বাংলাদেশের এক কোটি মানুষকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল।
পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে অনেক পরিবার তাদের ঘরের একটি বা দুটি কক্ষ শরণার্থীদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে,ভারতের মানুষের এই অবদান, ভারতের অবদান, ভারতের সেনাবাহিনীর আত্মদান বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
বঙ্গবন্ধু এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শুধুমাত্র বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য নয়, বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ হবার পর বঙ্গবন্ধুকে যাতে ফাঁসি দেয়া না হয়, সেজন্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে এমন করে ৩০টি দেশ সফর করেছেন।বঙ্গবন্ধুর মুক্তির মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করেছিল। এ অবদান কখনো ভোলার নয়।
বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি ছিল বিধায় তিনি ৭৪ মৈত্রী চুক্তি করেছিলেন, সেকারণেই কিন্তু আমরা ছিটমহলগুলো আমাদের অধিকারে আনতে পেরেছি, যদিও অনেকদিন এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আরো গভীরে প্রোথিত হয়েছে। আমাদের দুদেশের মধ্যে যে আন্ত:সংযোগ সেটি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমি মনে করি এটি এখনও যথেষ্ট নয়। আমাদের দুদেশের মানুষের মধ্যে যে আন্ত:সংযোগ, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বাড়ানো প্রয়োজন। এটিকে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে যে পর্যায়ে ছিল আমাদেরকে আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে সেই পর্যায়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। তাহলে দুদেশের মানুষ উপকৃত হবে,দুই দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। সেই জায়গা নিয়ে যেতে পারবো।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশ্বে প্রতিবেশি সম্পর্কের দিক দিয়ে একটা উদাহরণ হবে বলে আশাপ্রকাশ করে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই দুদেশের সম্পর্কের ভিত্তি গঠে উঠেছে। দুদেশের ক্ষেত্রে যা করতে হবে তা বঙ্গবন্ধু আগেই দেখিয়ে গেছেন, আমাদের নতুন করে কোন গাইডলাইনের দরকার নেই।
দুদেশের আশা আকাক্সক্ষা এক, কোন পার্থক্য নেই। জনগণ পর্যায়ে সম্পর্ক বাড়ে আমাদের সেদিকে নজর দিতে হবে, তাহলে সম্পর্ক টেকসই হবে।যা আমাদের জন্য ভাল তা আপনাদের জন্য ভাল, আবার যা আপনাদের জন্য ভাল তা আমাদের জন্য ভাল, এই নীতিতে এগিয়ে যেতে হবে, সন্দেহের কোন জায়গা নেই, আমাদের অনেক পথ যেতে হবে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেন দোরাইস্বামী।
সান নিউজ/এমআর/এম