রাসেল মাহমুদ : বিদেশে পলাতক দুর্নীতি মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের গ্রেফতার দুই সহযোগীর জবানবন্দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এবং বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একই ঘটনায় শাহ আলমকে ‘চোর’ ও ‘ডাকাত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংক ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটিও করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যেসময়ে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি বলা হচ্ছে তখন শাহ আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম ছিলেন আর এসকে সুর ছিলেন নির্বাহী পরিচালক।
নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করছেন। বরং এটি তার বিরুদ্ধে প্রফেশনাল হ্যারাসমেন্ট বলে মনে করছেন তিনি।
জানা গেছে, পিকে হালদারের অনিয়মের সহযোগী হিসেবে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হককে আটক করে। এরপর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে উজ্জ্বল কুমার নন্দী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর অডিটের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর এবং জিএম শাহ আলমসহ কয়েকজনকে এক কোটি টাকা করে মোট সাড়ে ৬ কোটি টাকা ঘুস দেয়া হয়েছে।
আর রাশেদুল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও পরিদর্শক দল তাদের কাছ থেকে নিয়মিত পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা ঘুস নিতেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম ছিলেন।
পিকে হালাদারের নানা আর্থিক অপকর্ম ঢাকতে কর্মকর্তাদের ওই অর্থ দেয়া হয়েছে বলে জানান তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম দাবি করেন এটা তার বিরুদ্ধে প্রফেশনাল হ্যারাসমেন্ট ও ষড়যন্ত্র।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সাননিউজকে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো হয়েছে তা ভিত্তিহীন। যে সময়ে আমার ঘুষ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে সে সময় আমি ওই ডিপার্টেমেন্টে ছিলাম না। আমি তখন ঢাকার বাইরে ছিলাম।
তিনি বলেন, অভিযোগের মধ্যে সত্যতার লেশমাত্র নাই। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমি ডিজিএম হিসেবে চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চে ছিলাম এবং হেড অফিসের অন্য দুইটা ডিপার্টমেন্টে ছিলাম। তারপর ২০১২ সালের মাঝামাঝি যখন জিএম হই তখন আমাকে টাকশালে দেয়া হয়। ওখান থেকে ২০১৩ সালের শেষের দিকে এখানে আসি।
তিনি আরও বলেন, যে অনিয়মগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলোতো ২০১৪ সালে আমরাই (বাংলাদেশ ব্যাংক) ফাইন্ড আউট করি। যারা এই অভিযোগগুলো এখন করছে ২০১৪ থেকে ২০২১ এই ছয় বছরে তাদের সাথে
গভর্নরের বহুবার মিটিং হয়েছে। সত্যিই যদি বিষয়গুলো ঘটে থাকে তাহলে তারা অফিসিয়ালি, আন অফিসিয়ালি অথরিটিকে জানাতে পারতো। সে সুযোগও ছিলো। কিন্তু তারা তখন কিছু বলে নাই।
শাহ আলম বলেন, আর একটা ইমপর্টেন্ট জিনিস হলো- আমি যে ডিপার্টমেন্টে ছিলাম সেটা পলিসি ডিপার্টমেন্ট। পলিসি ডিপার্টমেন্টটা পলিসি তৈরি করে। আমি ইন্সপেকশন ডিপার্টমেন্টে কখনোই ছিলাম না। যদি অনিয়ম ধামাচাপা দিতে অভিযোগগুলো করা হয় তাহলে কারা ইন্সপেকশনে গিলেছিলো, কারা অডিট করেছিলো তারা উত্তর দেবে। আমিতো ওই ডিপার্টমেন্টে ছিলাম না।
তিনি আরও বলেন, আমার ধারনা একটা প্রফেশনাল হ্যারাসমেন্টের উদ্দেশ্যেই এটা করা হচ্ছে। একই সাথে যারা প্রকৃত দোষী তারা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে।
এদিকে আলোচিত এই ঘটনা পর্যালোচনা করতে পাঁচ সদস্যের একটি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডেপুটি গভর্নর সাজেদুর রহমানকে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সাননিউজকে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই কমিটিকে তদন্ত কমিটি বলা হচ্ছে। কিন্তু এটি তদন্ত কমিটি নয়, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। কমিটি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে। এরপর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।
তবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
সান নিউজ/আরএম/এম