রাসেল মাহমুদ : ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তা উপার্জনের মাধ্যম করতে হবে। এটা করা না গেলে বিদেশি ভাষার প্রতি মোহ কাটবে না। বিদেশি ভাষার প্রতি আমরা বেশি আকৃষ্ট কারণ সেগুলো শিখে কর্মক্ষেত্রে ভালো উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ওপেন ডায়ালগ বাংলাদেশ (ওডিবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ড. আবদুল হাই ও অ্যাডভেকেট গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক।
প্রধান আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল।
সভাপতিত্ব করেন ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইউক্যাব) সভাপতি বাসুদেব ধর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উর্দুকে বাঙালির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো। শাষক শ্রেণি বাংলাকে হিন্দুদের আর উর্দুকে মুসলমানদের ভাষা বলে একটি বিভাজন তৈরি করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেছেন এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে পরে কোনও অন্যায় করবেন না তাও ভাবা যাবে না। তবে তার খেতাব কেড়ে নেয়ার আগে সরকারের মন্ত্রীদের উচিত ছিলো এটা প্রমাণ করা যে বঙ্গুবন্ধুর খুনের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। এটা মুখে বললেই হবে না প্রমাণ করতে হবে। আর প্রমাণ ছাড়া খেতাব কেড়ে নেয়ার কথা বললে শুধু বিভ্রান্তিই তৈরি হবে। এ জন্য কমিশন গঠন করে তদন্ত হওয়া দরকার ছিলো বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন কোনও নির্দিষ্ট ভাষার বিরুদ্ধে নয়। তাই বাংলা ভাষার আন্দোলন উর্দুর বিরোধী ছিলো না। এটা ছিলো মূল্যবোধের আন্দোলন। অধিকারের আন্দোলন।
সভায় প্রধান আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, বাঙালি এবং বাংলা ভাষায় যারা বিশ্বাস করে তারা বিশ্বাস করে ভাষা শহিদদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ভূখণ্ডে আত্মত্যাগী মানুষ যেমন রয়েছে তেমনি বিশ্বাস ঘাতকও রয়েছে। এটা প্রমাণ হয়েছে ১৯৭১ সালে। ১৯৭৫ সালেও পথভ্রষ্ট বাঙালি প্রমাণ করেছে বিশ্বাস ঘাতকতার বিজ আমাদের রক্তে রয়েছে। তবে এই সংখ্যা খুবই কম। বাঙালি ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত ছিলো বলেই ভাষা আন্দোলন হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কেউ সম্মুখে যুদ্ধ করেছেন, কেউ খাবার দিয়ে, কেউ থাকার জায়গা দিয়ে, কোনো মা-বোন সেবা দিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধকে সামগ্রিকভাবে ভাবতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলেও দাবি জানান তিনি।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আব্দুল হাই বলেন, বাংলা ভাষার সর্বজন স্বীকৃত একটি রীতি থাকতে হবে। একই ভাষার বিভিন্ন বানানরীতি বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
অ্যাডভেকেট গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, হাইকোর্টে যে জাজমেন্ট লেখা হয় তা ইংরেজিতে। এটা সাধারণ মানুষ বোঝে না। ইংরেজি অশুদ্ধ হলেও তা আমরা ব্যবহার করে আসছি। পৃথিবীর বৃহত্তম শুদ্ধতম ভাষার মধ্যে বাংলা দ্বিতীয়। মনের ভাব প্রকাশ করতে হলে বাংলার চেয়ে ভালো ভাষা আর হতে পারে না।
সাননিউজ/আরএম/এসএম