নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শীত মৌসুমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সি ক্রুজ সার্ভিস চালু হতে পারে।
বাংলাদেশে নব নিযুক্ত মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিরুজিমাথ সামির আজ সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি এ কথা বলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সি ক্রুজ চালুর সম্ভবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শীত মৌসুমে আমরা মালদ্বীপের সঙ্গে সি ক্রুজ চালু করতে পারি।’
গভীর সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ আহরণে মালদ্বীপের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের করোনা টিকা দেওয়ার জন্য মালদ্বীপের প্রতি অনুরোধ জানান।
শ্রমিকরা মালদ্বীপের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, তার সরকার সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের টিকা দেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে।
এ সময় বাংলাদেশে অবস্থানরত মালদ্বীপের নাগরিকদের কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রথমে শিক্ষকদের টিকা দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে তার দেশের আগ্রহের কথা জানিয়ে মালদ্বীপের হাইকমিশনার বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে চাই।
এ প্রসঙ্গে মালদ্বীপের হাই কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তিতে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরের সময় এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিশারিজ ছাড়াও আমাদের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আছে। এগুলোর বিষয়েও মালদ্বীপের উদ্যোক্তারা বিবেচনা করতে পারে। সিরামিক, ওষুধ, তথ্য প্রযুক্তি খাতেও মালদ্বীপ বিনিয়োগ করতে পারে।
মালদ্বীপের রাজধানী মালে আইল্যান্ডের পাশে নতুন শহর গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে সেখানে বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানান হাইকমিশনার।
মালদ্বীপের আরও বেশি ছাত্র-ছাত্রীকে বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমরা অনেক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ, মেডিকেল কলেজ, এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানে মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারে।
এ সময় হাইকমিশনার তাদের পর্যটন থেকে শিক্ষা গ্রহণে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সেখানে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মালদ্বীপ পর্যটনে ভালো। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সেখানে পর্যটন বিষয়ে পড়াশোনা করতে যেতে পারে।
কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশে সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি পণ্য আছে, কৃষি উৎপাদন দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনা সংকটের সময় প্রচুর খাদ্য সহায়তা প্রদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমরা প্রচুর খাদ্য বিতরণ করেছি এবং করোনার মধ্যে কয়েক দফা বন্যা হওয়ার কারণে, আমাদের কিছুটা খাদ্য আমদানী করতে হচ্ছে।
মালদ্বীপের হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরকে ‘খুবই ভাল উদ্যোগ’ বলেও হাই কমিশনার উল্লেখ করেন।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা খুব অমানবিক পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে বসবাস করছিল। সেখানে বন এবং পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছিল। তাদের জন্য আমরা আরও ভাল ব্যবস্থা এবং আধুনিক বন্দোবস্ত করছি, আমরা পুরো এলাকাটার উন্নয়ন করবো।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা ও বিভিন্ন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন মালদ্বীপের হাইকমিশনার।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনায় যেখানে সারা বিশ্বকে ভুগতে হয়েছে, সেখানে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নৌ-বাহিনীর জাহাজে ১শ’ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম মালদ্বীপে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
এই সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হাইকমিশনার বলেন, খুব কঠিন সময়ে মালদ্বীপকে অনুদান দিয়েছিল বাংলাদেশ।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্ধু প্রতিম দেশের প্রতি এটা আমাদের দায়িত্ব।
হাইকমিশনারের মাধ্যমে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সান নিউজ/এসএম