মাহমুদুল আলম: বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড দেয় আদালত। পরে উচ্চ আদালত তার কারদণ্ড বাড়িয়ে ১০ বছর করে। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়।
অরফানেজ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাভোগরত অবস্থায় সরকারের নির্বাহী আদেশে গতবছর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়। ছয় মাসের জন্য দেয়া ওই মুক্তির মেয়াদ গত ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হলে পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে মুক্তি পান তিনি। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে নেয়া মুক্তির মেয়াদও শেষ হতে যাচ্ছে আগামী মাস মার্চে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হবে কিনা- এসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যতম আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন সান নিউজকে বলেন, ‘এটা দলের স্টেন্ডিং কমিটির মেম্বারদেরকে জিজ্ঞেস করুন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন সাননিউজকে বলেন, আবেদনটি করেছিন বেগম জিয়ার পরিবার, তার চিকিৎসার জন্য। এখনও বিষয়টি পরিবারই দেখবে। তবে বেসিক কোন চিকিৎসা তার হয়নি। আগের মতোই আছেন। এখন পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করবে। বিশেষ করে করোনার কারণে মৌলিক কোন চিকিৎসাই করাতে পারেননি তিনি।
আবেদন পরিবারের পক্ষ থেকেই করতে হবে কেন? এই প্রশ্নের জবাবে খোকন বলেন, আগের দুইবার যেহেতু পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিন, এখনো তাই করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে আইনত কী সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন বা পারেন না, কতটা পাচ্ছে বা পাচ্ছেন না?- এই বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহবায়ক খন্দকার মাহবুব হোসেন সান নিউজ কে বলেন, ‘এটা আমাকে জিজ্ঞাসা না করে আমাদের মহাসচিব আছেন, তার কাছে জিজ্ঞাসা করুন।’
কিন্তু আইনি ব্যাপারগুলো তো আপনারা ভালো বলতে পারবেন- বললে সপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘আমি এখন এগুলো দেখছি না। আমি দেখছি না। উনি তো প্যারোলে আছেন, প্যারেলে তো না, স্পেশালি তাকে রাখা হয়েছে।’
‘স্পেশালি রাখা’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমি এই ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেব না।’
কিন্তু আইনি বিষয়গুলো তো মহাসচিব মহোদয়ের চেয়ে আপনারা ভালো জানবেন- বললে তিনি বলেন, ‘না, না, এটা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, অথবা অন্য যারা আছেন, তাদের জিজ্ঞাসা করেন।’
কিন্তু উনার কেস তো আপনিও ডিল করেন, আপনি আছেন তো উনার মামলায়, নাকি?- এই প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘অবশ্যই আছি। এখন মামলাই তো নাই বলতে গেলে। উনি এখন সরকারের ইসে আছে, তার বিরুদ্ধে মামলা তো এখন সব স্থগিত অবস্থাতে আছে।’
উনি তো প্যারেলে আছেন, তাই না?- জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘না, সরকারের বিশেষ ক্ষমতায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আমার আগের স্টেটমেন্টগুলো দেখেন। এখন সে আসামি হিসেবেই আছে।’- বলেন খন্দকার মাহবুব।
আগে স্টেটমেন্ট দিলেও খালেদা জিয়া এতদিন বাহিরে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওইভাবেই আছে। একজন আসামি হিসেবে, যা যা প্রাপ্য তাই পায়। ধরে নেন এখন উনি জেলেই আছেন। সরকার বিশেষ ক্ষমতায় তাকে জেলে থেকে বাহিরে রেখেছে। একজন আসামি জেলখানায় থাকলে যা যা করতে পারে, উনিও তার বেশি কিছু করতে পারবেন না।’ ‘উনিও একই সুবিধা পাবেন।’
জেলে থাকা আসামিদের সঙ্গে তার আইনজীবী দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার আইনজীবী বা নেতাকর্মীরা দেখা সাক্ষাৎ করতে পারেন কিনা? তাছাড়া সুযোগ সুবিধা ‘পাবেন’ বলছেন, পাচ্ছেন কিনা- তা জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, ‘চাইলে পাবেন।’ ‘কিন্তু যেহেতু করোনাকাল, তাই তিনি কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন না।’
তাছাড়া প্যারোলে থাকলে কী পারবে, কী পারবে না? তা জানতে চাইলে সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান সান নিউজ কে বলেন, ‘না, না, না, আমি এটা বলবো না। এটা যারা তার (খালেদা জিয়া) কেস ডিল করেন, তাদেরকে বলেন। আমি তার কেস ডিল করি না। আমার দুর্ভাগ্য। আমি ম্যাডামের কেস ডিল করি না। যারা তার কেস ডিল করেন, তাদের সঙ্গে দয়াকরে কথা বলুন।’
সান নিউজ/এসএস