জাতীয়
করোনার প্রভাব

ভালো নেই রাজধানীর হকাররা

রাসেল মাহমুদ: তিন বছর ধরে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় বিড়ি, সিগারেট বিক্রি করছেন মো. রাকিব। প্রথম দিকে প্রতিদিন দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হতো। এতে তার লাভ থাকতো ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। কখনো বেশিও হতো।

কিন্তু লকডাউন পরবর্তী সময়ে তার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। বিক্রি নেমেছে হাজার টাকায়। তাই বাধ্য হয়ে রুমাল, মাস্কসহ করোনা সামগ্রি বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। এতেও সংসারের খরচ মেটাতে তার হিমশিম খেতে হয়।

রাকিব সাননিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের আগে হকার কম ছিলো। এখন হকার বেড়েছে তিনগুণ। এ জন্য কাস্টমারও ভাগাভাগি হয়ে গেছে। এছাড়া আগের মতো মানুষ বিড়ি সিগারেটও কেনেন না। এ জন্য বাধ্য হয়ে মাস্ক আর রুমাল বিক্রি শুরু করেছি।

তিনি বলেন, সারাদিন এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা বিক্রি করি। এতে ৩০০ বা ৪০০ টাকা থাকে। যা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়।

একই কথা বলেন, 'তিলের খাজা' বিক্রেতা ফজলুল হক। সাননিউজকে তিনি জানান, হকার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বেড়েছে। যে যেভাবে পারছে পণ্য বিক্রি করছে। আগে একই ধরনের পণ্য হাতেগোনা কয়েকজন বিক্রি করতো। কিন্তু এখন হকার অনেক বেড়েছে। তাই বিক্রি আর তেমন নেই।

ফজলুল হক অভিমানের সুরে বলেন, সরকার এতো মানুষকে সহায়তা দিলো, অনুদান দিলো কিন্তু আমাদের (হকার) কোনো কিছুই দিলো না। আমাদের কিছুটা সহযোগিতা করলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারতাম।

শুধু রাকিব বা ফজলুল নন, রাজধানীর ছিন্নমূল হকারদের অধিকাংশই এখন অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। খেয়ে-না খেয়ে পার করছেন দিন। করোনা মহামারির কারণে চাকরি হারিয়ে অনেকেই এই পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এতে লকডাউন পরবর্তী সময়ে হকার বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। তাই সামগ্রিকভাবে কমেছে বিক্রি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হকারদের ক্রেতাদের বড় একটি অংশ সাধারণ মানুষ। তারাই স্বল্প দামের পণ্যগুলো হকারদের কাছ থেকে কিনে থাকেন। কিন্তু লকডাউন পরবর্তী সময়ে এই সাধারণ মানুষই বেশি অর্থকষ্টে। এতে হকারদের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।

সদ্য কৈশোর পেরোনো কিশোরগঞ্জের ছেলে মেহেদী হাসান বাপ্পী বিক্রি করেন ছোট বাচ্চাদের বই। করোনার আগে যা বিক্রি করতেন তা দিয়ে স্বাচ্ছন্দে না হলেও সংসারটা চালাতে পারতেন। কিন্তু লকডাউনের পর তার বিক্রি অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। ফলে অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি।

সাননিউজকে মেহেদী হাসান বাপ্পী বলেন, আমাদের নিয়ে কেউ কথা বলে না। কোনো ইউনিটিও নেই। তাই আমাদের প্রতিনিধি হয়ে সরকারের কাছে কেউ আমাদের বিষয়টি উত্থাপন করেনি। ফলে সাহায্য সহযোগিতাও আমাদের ভাগ্যে জোটে না। তাই খেয়ে না খেয়ে আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি।

বিভিন্ন গাড়িতে রান্নার আইটেম বিক্রি করেন মো. মাইদুল ইসলাম। তিনিও অর্থ সঙ্কটের কথা জানান। বলেন, করোনার কারণে কাজ হারিয়ে হকারি শুরু করেছেন অনেক মানুষ। তাই বিক্রিতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রয়োজনটা কেউ বুঝতে চায় না। অনেক সময় বাসে উঠতে গেলেও উঠতে দেয়া হয় না। আমাদের ক্রেতারা মূলত বাসযাত্রী। তাই বাসে উঠতে না দিলে আমাদের কিছু করারও থাকে না।

হকারদের কোনো সংগঠন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাইদুল বলেন, কার্যকরী কোনো সংগঠন আমাদের নেই। তবে সংগঠন না থাকলেও আমাদের মহাজনরা অনেক ক্ষেত্রে সাপোর্ট দেন।

টুথব্রাশ বিক্রেতা আকতার হোসেন জানান, সাধারণ মানুষের কাছে টাকা নেই। যার কাছে টাকা নেই সেতো মাল কিনবে না। এ জন্য ব্যবসা আর আগের মতো নেই।

বাদাম বিক্রেতা মো. রাজিবও একই কথা বলেন। তার ধারণা সবাই এখন যুদ্ধ করে বাঁচার চেষ্টা করছেন। পারত পক্ষে কেউ 'অযথা' টাকা খরচ করছে না। তাই বিক্রি আর আগের মতো নেই।

ঝাল-মুড়ি বিক্রেতা উসমান গণি জানান, করোনা পরবর্তী সময়ে এমনিতেই বিক্রি কমেছে; তার উপর বেড়েছে মুড়ি, তেল আর ছোলার দাম। আগে যে তেল কিনেছি ৮০ টাকায় এখন তা ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। মুড়ির দামও কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে। ছোলাও কিনতে হচ্ছে ২০ টাকা বেশি দামে। কিন্তু আমাদের ব্যবসাতো বাড়েনি।

তিনি বলেন, গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালির বোয়ালিয়াতে স্ত্রীর সাথে দুই মেয়ে আর এক ছেলে থাকে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়।

তিনি জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের দিন বাড়ি যাওয়ার পথে তিনি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে তার ডান পা ভিষণভাবে জখম হয়। চিকিৎসার জন্য ধার-দেনা করে ৭ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এখন তিনি নিঃস্ব। তাই সরকারের সহযোগিতা চান তিনি।

হকারদের কষ্ট সারাজীবনের বলে মনে করেন পানি বিক্রেতা মো. জামাল। তিনি বলেন, করোনার আগেও আমাদের কষ্টে জীবন যেতো। করোনা এসে কষ্টটা বাড়িয়ে দিয়েছে শুধু। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই কষ্ট সহজে দূর হবার নয় বলেও মনে করেন দুই সন্তানের জনক জামাল।

সাননিউজ/আরএম/আরআই

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

নলছিটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির নলছিটিতে শুরু হয়েছে ভূট্টো স্মৃত...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছ...

ফের বাড়ল সোনার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বাজারে ফের সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা...

ফের হারলো সাকিবের দল

স্পোর্টস ডেস্ক : আবুধাবির টি-টেন টুর্নামেন্টে ফের হারের মুখ...

নোয়াখালীতে দুই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীতে পৃথক স্থান থেকে দুই গৃহবধূর...

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা