নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালাতে আজ রায় দেওয়ার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রয়ারি) সকালে এ মামলায় জেল হাজতে থাকা ৩৪ জন আসামীকে কারাগার থেকে সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবীর এর আদালতে হাজির করানো হবে।
সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গেল বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামীপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবির বিকালে আসামীদের পূর্বের জামিন বাতিল করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এ মামলার রায় প্রদানের দিন ধার্য করা হয় আজ ৪ ফেব্রুয়ারি।
জামিন বাতিল হওয়া আসামীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া পৌরসভার দুইবারের সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা আক্তারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, তিনজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন, রকিবুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম, মো. আব্দুর রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. আব্দুর রকিব মোল্ল্যা, মো. আক্তারুল ইসলাম, মো. আব্দুল মজিদ, মো. হাসান আলী, ময়না, মো. আব্দুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. জহুরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, অ্যাড. মো. আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, মো. আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, রকিব, ট্রলি শহীদুল, মো. মনিরুল ইসলাম, শেখ কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, দিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্ল্যা, আব্দুল গফফার গাজী, রিঙ্কু, অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুস সামাদ, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন।
পলাতক আসামীরা হলেন- আব্দুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, মো. আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, সঞ্জু , নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কণক, মো. মাহাফুজুর রহমান এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন সমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ জানান, ন্যায়বিচার হলে সকল আসামী সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন।
অপরদিকে বিবাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহানারা আক্তার বকুল ও অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ বলেন, মামলার এজাহার, পুলিশের অভিযোগপত্র এবং সাক্ষীদের জবানবন্দির মধ্যে তথ্যগত ব্যাপক গরমিল ও অসংলগ্নতা রয়েছে। সাক্ষীরা আদালত কোনভাবেই আসামীদের দোষী প্রমাণ করতে পারেননি। তারা আরও বলেন, ন্যায়বিচার হলে সকল আসামি খালাস পাবেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষিতা এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে আসেন। হাসপাতাল থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগ ওঠে তৎকালিন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত ৭০/৭৫ জনের নামে থানায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে এক যুগ পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
এরপর ২০১৫ সালের ১৭ মে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জনকে স্বাক্ষী করে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শেখ সফিকুল ইসলাম। সাতক্ষীরা চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আসামীপক্ষের আপীল আবেদনে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন উচ্চতর আদালত।
সান নিউজ/এম