নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ও আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণকৃত সহায়তা নানা কারণে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের কাছে সময় মতো পৌঁছে না। বরাদ্দ ও বিতরণের অপর্যাপ্ততা, সেবা সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণার অভাব, সুবিধাভোগী নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণমূলক না হওয়া, সুবিধাপ্রাপ্তিতে কারিগরি ত্রুটি, তথ্য সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, নির্ধারিত ডাটাবেজ না থাকা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ত্রাণ সম্পর্কিত অভিযোগ গ্রহণ এবং নিষ্পত্তির কোনও প্রযুক্তিনির্ভর ও কার্যকর ব্যবস্থা না থাকা।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আয়োজিত সংলাপে এসব তথ্য উঠে আসে। এ সময় উত্থাপিত মূল প্রতিবেদনে সহায়তা বিতরণে ৭ ধরনের সমস্যা এবং এগুলো দূরীকরণে সুপারিশ দেওয়া হয়।
সিপিডি এসব সমস্যা সমাধানে কিছু সুপারিশ দিয়েছে। সুপারিশে বলা হয়, করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচির কার্যকারিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বরাদ্দ নির্ধারণে একটি সূচকের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় পর্যায়ের দারিদ্র্যের হার, জনসংখ্যা, বেকারত্বের হার ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে বহুমাত্রিক মাপকাঠি নির্ধারণ করতে হবে।
করোনা ও আম্পান মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি এবং কৃষি প্রণোদনা : সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ সময় জানানো হয়, করোনার কারণে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে আছেন ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ, যা সর্বশেষ জরিপকৃত শ্রমশক্তির (২০১৬-১৭) প্রায় ২০ দশমিক ১ শতাংশ।
সিপিডি (২০২০) প্রাক্কলনে এই মহামারী (উচ্চ) দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশে নিয়ে যাবে। এই নতুন দরিদ্রর সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ। উপকূলীয় জেলাগুলোতে সাম্প্রতিক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আম্পান এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সংলাপে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার একটি জরিপ তুলে ধরে বলা হয়, ২ হাজার ৫০০ টাকা মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য এমন ৪ হাজার জনের একটি তালিকা জাতীয় পর্যায়ে পাঠানো হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে প্রেরণকৃত তালিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ মানুষ সহায়তা পায়নি। পেয়েছে ৬০ এর কাছাকাছি মানুষ।
ইউনিয়ন পর্যায়ে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলোচনায় জানা যায়, চাল বিতরণের স্থান বা গোডাউন কাছাকাছি হওয়ায় সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়নি। ২ হাজার ৫০০ টাকা (নগদ) সহায়তার ক্ষেত্রে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরেও সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের বেশি তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও নগদ টাকা পাননি বলে সিবিওদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
প্রতিজন কার্ডধারী কৃষক ৫০৮ টাকা করে বীজ বাবদ বরাদ্দ পেয়েছেন। এক্ষেত্রে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত কৃষি প্রণোদনার তথ্য বিশ্লেষণে মোট কার্ডধারী কৃষক এবং উপজেলাওয়ারি প্রাপ্ত কৃষকের হারের মধ্যে কিছুটা অসামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়। যেমন নেছারাবাদ এবং পিরোজপুর সদরে মোট কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়া সত্ত্বেও হাইব্রিড বোরো ধানের বীজ পেয়েছেন এমন কৃষকের হার বেশি ছিল।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও সিনিয়র রিসার্চ এসোসিয়েট, মোস্তফা আমির সাব্বিহ সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জনগোষ্ঠী ভিত্তিকের চেয়ে দরিদ্রতা ও বিপন্নতা ভিত্তিক ত্রাণ তৎপরতা অনেক বেশি কার্যকর হয়। এই কার্যকারিতা নিশ্চিতে আরও তথ্য-উপাত্ত ও প্রশাসনিক সমন্বয় প্রয়োজন। যোগ্য মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন।
সান নিউজ/এসএ