মাহমুদুল আলম: মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের (পাপুল) চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে কুয়েতের আদালতে। পাশাপাশি তাকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) কুয়েতের ফৌজদারি আদালত বাংলাদেশের সাংসদের বিরুদ্ধে এই রায় দেয়।
এছাড়া শহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশের আদালতেও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা আছে। এরমধ্যে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডি। আর পাপুল কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার পর গত ১১ নভেম্বর তার এবং তার স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক।
এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে এই সংসদ সদস্যকে নিয়ে। বিশেষ করে বিদেশের আদালতে দণ্ডিত হওয়ার পর এসব আলোচনা-সমালোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে পাপুলের সহায়-সম্পত্তি কী আছে- সে বিষয়। জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আগে স্বাক্ষর করা তার হলফনামা থেকে এর পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হলো।
হলফনামায় মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে স্নাতকোত্তর। হলফনামায় স্বাক্ষরকালে বা অতীতে তিনি কোন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এতে। তার পেশার বিবরণে লেখা আছে- ব্যবসা (দেশে ও বিদেশে)।
তার নিজের বা তার উপর নির্ভরশীলদের আয়ের উৎসের ঘরে কৃষিখাতে তার বাৎসরিক আয়ের ঘরে লেখা আছে 'নাই'। আর এই খাতে তার স্ত্রীর আয় দেখানো আছে ছয় লাখ টাকা। বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ তার নিজের ও স্ত্রীর আয়ের ঘরে লেখা আছে 'নাই'। ব্যবসা থেকে তার নিজের বা তার স্ত্রীর আয়ের ঘরে কোন লেখা নেই।
শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানতের ঘরে নিজ নামে দেখানো হয়েছে ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ১৭৪ টাকা এবং নির্ভরশীলদের ঘরে দেখানো আছে এক কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৬ টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাতে তার এবং তার উপর নির্ভরশীলদের আয়ের ঘরে লেখা আছে 'নাই'।
অস্থাবর সম্পদের হিসাবে তার নিজ নামে এবং স্ত্রী সেলিনা ইসলামের নামে নগদ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে যথাক্রমে তিন কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৩ এবং চার কোটি ১৫ হাজার টাকা। উভয়ের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার ঘরে কিছু লেখা নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণে তার নিজের এবং স্ত্রীর নামে এফডিআর উল্লেখ করা আছে যথাক্রমে আট কোটি ৬২ লাখ ১৩ হাজার ৮২ টাকা এবং ২০ কোটি ১০ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ টাকা।
বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ার (বন্ড, অর্জনকালীন সময়ের মূল্যসহ) নিজ নামে উল্লেখ করা আছে ২২ কোটি ৯১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ১৬ কোটি ২০ লাখ (ওয়েজ আরনার বন্ড) টাকা।
হলফনামায় তার নিজ নামে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি ল্যান্ড ক্লোজার প্রাডো উল্লেখ করা হয়েছে। আর স্ত্রীর ঘরে কোন কিছু লেখা নেই।
স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলংকারাদি নিজের ও স্ত্রীর নামে উল্লেখ করা আছে যথাক্রমে ৩৫ ভরি এবং ৪০ ভরি। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী তার নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে উল্লেখ করা আছে যথাক্রমে এক লাখ ৩০ হাজার এবং দেড় লাখ টাকা। আসবাবপত্র উল্লেখ করা আছে যথাক্রমে এক লাখ ১০ হাজার ও এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদের হিসাবে তার নিজ নামে কৃষি জমির পরিমাণের ঘরে কিছু লেখা নেই। আর স্ত্রীর নামে দুই হাজার ছয়শ' ৩২ দশমিক ১৪ শতাংশ লেখা আছে। যার অর্জনকালীন মূল উল্লেখ করা হয়েছে ৯ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬০ টাকা। অকৃষি জমি নিজের ও স্ত্রীর নামে উল্লেখ করা আছে যথাক্রমে পাঁচ কাঠা এবং সাড়ে ২৫ কাঠা।
এছাড়া দালান (আবাসিক বা বাণিজ্যিক), বাড়ি/এপার্টমেন্ট সংখ্যার ক্ষেত্রে উভয়ের ঘর ফাঁকা আছে। তবে কন্যা ওয়াফা ইসলামের নামে এক কোটি ২৬ লাখ ৪২ হাজার টাকার এপার্টমেন্ট উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনজীবী (নোটারি পাবলিক) আবুল কাশেম ফজলুল হক খান স্বাক্ষরিত এই হলফনামায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর স্বাক্ষর করেন মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম।
সান নিউজ/এসএস