নিজস্ব প্রতিবেদক : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজধানীতে যারা ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলসহ খাল দখল করে অবৈধভাবে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে ও নাগরিক সেবা প্রদানে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না বলেও জানান মন্ত্রী।
রোববার মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ও প্রাকৃতিক খালসমূহের ব্যবস্থাপনাকল্পে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে, সিএস ও আরএস দেখে ধাপে ধাপে সব জায়গা চিহ্নিত করা হবে। এরপর নদী-খাল দখল করে যত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালাবে এবং দুই এতে মেয়র সফল হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীন যেসব খাল রয়েছে সেগুলো সিটি কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান অধিক দায়িত্বশীল হবে বলেই ওয়াসা থেকে খালের দায়িত্ব দুই সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া হয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকা খালের দায়িত্ব দুই সিটি কর্পোরেশনেকে দেয়ার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হবে বলেও জানান তিনি।
সভায় মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন এবং প্রাকৃতিক খালসমূহের ব্যবস্থাপনাকল্পে দুই সিটি কর্পোরেশন কতৃক গৃহীত নানা কর্মপরিকল্পনা কথা তুলে ধরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে যেসব মতামত, কর্ম পরিকল্পনার এবং প্রকল্পের কথা জানিয়েছেন এর বাইরেও কিছু প্রকল্প এবং কর্ম পরিকল্পনা নিতে হবে। এসব কর্মপরিকল্পনা এবং প্রকল্প সমন্বয় করে গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন তিনি।
এর আগে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়ন, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং দেশের মানুষকে উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করতে কারো সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না। ঢাকাকে শুধু বাসযোগ্য নয়, দৃষ্টিনন্দন করে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করা হবে।
তিনি বলেন, শুধু বৃষ্টির পানি যাওয়ার এবং খালগুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে এটা হস্তান্তর করা হয়নি। খাল হস্তান্তরের উদ্দেশ্য হলো যেসব খালের জায়গা অবৈধভাবে দখল হয়েছে তা দখলমুক্ত করে সংস্কার করা এবং নগরীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করা।
মন্ত্রী বলেন, ওয়াসার কাছে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা থাকা অবস্থায় যেসকল নতুন প্রকল্প পাস হয়েছে ও যেগুলো চলমান রয়েছে সেগুলো দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। খালসমূহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে ওয়াসার কাছ থেকে প্রাপ্ত যন্ত্রপাতির পাশাপাশি আরো নতুন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে বলে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অবহিত করলে মন্ত্রী নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত দেন।
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন দীর্ঘমেয়াদি (আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে, মধ্যমেয়াদি (আগামী দুই বছরের মধ্যে) এবং স্বল্পমেয়াদী (আগামী ছয় মাসের মধ্যে) কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে। এছাড়া দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিজস্ব এবং সরকারি অর্থায়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা জানায়।
সভায় উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, রাজউক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলম, দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
সান নিউজ/এমআর/আরআই