নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে রাস্তায় বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এই মুহূর্তে নিজ বাসা ছেড়ে অন্য কারো বাসায় যেতে নিষেধ করা হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাড়ির সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, বাড়িতে বসবাসরত ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিষেধ। অথচ এক শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়তই প্রবেশ করছে বাসায়। ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজধানী জুড়ে। মিশছে অনেকের সাথে। তারা ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের অন্তত ৮ হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মী।
শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে একজন কর্মী কাজে যেতে হয় ভোর ৫টায়, ছুটি বিকেল ৫টায়। কেউ বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন নিয়ে যান নির্ধারিত স্থানে। কেউবা সিটি কর্পোরেশনের রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে গড়িতে তোলা তার কাজ করেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অধিকাংশ পরিচ্ছন্ন কর্মীই মাস্ক পরেন না। কেউ কেউ মাস্ক পরলেও সংখ্যা খুবি কম। হ্যান্ড গ্লাভস তো প্রশ্নই ওঠে না।
পরিচ্ছন্ন কর্মীরা একে অপরের সংস্পর্শে আসায় করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতেও প্রবেশ করতে পারে করোনাভাইরাস।
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকার অফিস আদালত ছুটি দেয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনো ছুটি নাই। ময়লা পরিষ্কার করেই দিন শেষ হয়ে যায়, মাস্ক পরবো কখন।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কেন মাস্ক ও গ্লাভস দেওয়া হয়নি, এ বিষয়ে ক্লিন টেকের সিআইও আসাদুল হক বলেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীরা মাস্ক পরতে চায় না। আবার আমরাও সবাইকে মাস্ক সরবরাহও করতে পারিনি। আমরা মাস্ক দেওয়া শুরু করেছি, সবাই পেয়ে যাবে, একটু সময় লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের নিরপত্তা নিশ্চিত করতে। তবে এর জন্য সিটি কর্পোরেশনকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মত দেন তিনি।
এরই মধ্যে রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের টোলারবাগ এলাকা লকডাউন করেছে প্রশাসন। সেখান থেকেও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মাধ্যমে ময়লা আবর্জনা আসছে বাইরে।
সে এলাকার এক পরিচ্ছন্ন কর্মী জানান, করোনা নিরাপত্তার জন্য জিনিসপত্র না দেওয়ায় আমি কাজে যাইনি। আমার পরিবর্তে অন্য একজন যাওয়ার কথা।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে অন্তত ৮ হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম শফিকুর রহমান জানান, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মাঝে মাস্ক ও গ্লাভস বিতরণ করা হয়েছে। বাকিদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. জাহিদ হোসেন বলেন, অঞ্চলভিত্তিক সব সংস্থাগুলোকে গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহের সময় মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংগঠনগুলো বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি বাড়ি থেকে অর্থ নিয়ে থাকে। তারপরেও, তারা কেন পরিচ্ছন্নকর্মীদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস সরবরাহ করবে না। এটি কঠোরভাবে মেনে চলতে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনকোন বাড়ির মালিক বলেন, এখন আর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বাসার ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। বাসার বাহিরে ড্রাম রাখা আছে। সবাই সেখানে বর্জ্য ফেলে আসে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সেখান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে।
অনেক বাড়িতে এখনও আগেরমতই বাসার ভেতরে ঢুকে ময়লা সংগ্রহ করছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এমনই এক বাড়ির মালিক বলেন, তাদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমনে ঝুঁকিতো থেকেই যায়। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থাতো করা যাচ্ছে না।
বাড়ির মালিকরা বলছেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সচেতন করতে অঞ্চলভিত্তিক সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে। সেই সাথে এর দায়িত্ব নিতে হবে সিটি কর্পোরেশনকেও।
পরিচ্ছন্ন কর্মীর নিরাপত্তাহীনতা মানে রাজধানী বাসীর নিরাপত্তাহীনতা। তাই তাদের মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এবং করোনাভাইরাস সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে উদ্যোগ নিতে হবে দুই সিটি কর্পোরেশনকেই, মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞারা।