নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রত্যেক বিভাগের একটি কেন্দ্রীয় কারাগারে কোয়ারেন্টিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলোকে আইসোলেশন সেন্টারে রূপান্তর করা হবে।
এছাড়া প্রত্যেক কারাগারে জরুরি ফোন বুথ স্থাপন করেছে কারা অধিদপ্তর। সম্প্রতি কারা অধিদফতর থেকে দেশের ৬৮টি কারাগারে ২০টি বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আদালতে বন্দি হাজিরা স্থগিত করা হয়েছে। দেশ জুড়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলার অংশ হিসেবে দেশের সবকটি কারাগারে বিশেষ এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কারা অধিদফতর।
কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন বলেন, "করোনার কারণে আমরা প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। সবগুলো কারাগারে এ সংক্রান্তে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিনা কারা অধিদফতর থেকে তা মনিটরিং করা হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "এখন কোয়ারেন্টিন সেন্টার ঘোষণা করা হলেও সেগুলোকে আইসোলেশন সেন্টার করার মতো প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এ বিষয়ে সহায়তা করছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে তারা পিপিইসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করবে।"
কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য প্রতি কারাগারে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রতিটি কারাগারে আলাদা সেল খোলা হয়েছে নতুন বন্দিদের জন্যে। বাগেরহাট কারাগারে এরই মধ্যে নতুন বন্দী তিন চীনা নাগরিককে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। অধিক সংখ্যক বিদেশফেরত প্রবাসীদের কারণে মাদারীপুর কারাগার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা অধিদফতর।
কারা অধিদপ্তরের ২০টি বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে:
১. কারা উপ-মহাপরিদর্শকরা চক্রাকারে তার অধীনস্থ অন্তত ২টি করে কারাগার পরিদর্শন করবেন প্রতি সপ্তাহে।
২. গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরেজমিনে যথাযথভাবে তদারকি ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন তারা।
৩. পরিদর্শনের সময় পরিলক্ষিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কারা অধিদফতরে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
৪. প্রত্যেক কারাগারের মূল ফটকে সাবান/স্যানিটাইজার/হ্যান্ড ওয়াশ প্রস্তুত রাখতে হবে। নতুন বন্দি যেন তার হাত মুখ ভালোভাবে ধুতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা লক্ষণ রয়েছে এমন দর্শনার্থী কোনোভাবেই কারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারে।
৫. শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষায়সরবরাহকৃত ‘ইনফ্রারেড থার্মোমিটার’ ব্যবহার করতে হবে।
৬. নতুন বন্দিদের সবাইকে অন্তত ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
৭. কারাফটকের দর্শনযোগ্য স্থানে জাতীয় হটলাইন নম্বরসমূহ প্রদর্শন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. জেলকোড অনুসরণ করে হাজতি বন্দিদের প্রতি ১৫ দিন অন্তর এবং কয়েদীদের প্রতি ৩০ দিন অন্তর দর্শনার্থীদের সাক্ষাতের অনুমতি পাবেন। প্রতি বন্দির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন সর্বোচ্চ ২ জন।
৯. বন্দিদের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. করোনা আক্রান্ত সন্দেহজনক কোনও বন্দির জামিননামা আসলে তাকে ছাড়ার আগে স্থানীয় সিভিল সার্জনকে জানাতে হবে।
১১. রোল কলের সময় স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও করণীয় সম্পর্কে সবাইকে অবগত করতে হবে।
১২. কারা অভ্যন্তরে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বুট/জুতা ক্লোরিন কিংবা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটযুক্ত পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
১৩. স্প্রে মেশিন দিয়ে কারাগারের প্রত্যেকটি কক্ষ জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
১৪. জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সব ধরণের ছুটি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
১৫. কারা কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের বিদেশ ফেরত যে কোন আত্মীয়-স্বজনের কারা ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে হবে।
১৬. কর্মস্থলে সকলের উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৭. বন্দিদের শরীর চর্চা, গণশিক্ষা কার্যক্রম, মাসিক বন্দি দরবারসহ যেকোনও জনবহুল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি স্থগিত করা হল।
১৮. পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বন্দিদের ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া যাবে, তবে তা শর্ত সাপেক্ষে।
১৯. করোনার সংক্রমন প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত/পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
২০. বন্দিদের স্বাস্থ্য-ঝুঁকি ও স্থিতিশীলত স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক কারাগারে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।