নিজস্ব প্রতিবেদক : এক কেজি চাল উৎপাদনে ৩ হাজার লিটারের বেশি পানি প্রয়োজন হয় এমন তথ্য প্রচলিত রয়েছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, সেটি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০০ লিটার প্রয়োজন হয়। ধানের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার পাশাপাশি কৃষকদের লাভবান করতে উন্নত জাতের ধান উদ্ভাবনে কৃষিবিজ্ঞানী ও গবেষকদের আরও দায়িত্ব নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) গাজীপুর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) আয়োজিত ব্রি বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা ২০১৯-২০ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। কর্মশালায় প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও বিশেষ অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল ও কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ব্রির উদ্ভাবিত জাত ও বিজ্ঞানীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কৃষকের কাছে যেসব ফসল জনপ্রিয় হয় এবং সহজে পৌঁছানো হয় এমন মানসম্পন্ন জাত উদ্ভাবন করতে হবে। একটি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ জাত না করে বহু পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ জাতের ধান উদ্ভাবন করতে হবে। মোটা চালের চাহিদা দিন দিন কমছে, সেজন্য চিকন চাল এবং কৃষক ও ভোক্তার চাহিদা বিবেচনা করে জাত উদ্ভাবনে এগিয়ে আসতে হবে।
বিবিএস ও কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান মিলে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কৃষি সম্প্রসারণের পরিসংখ্যানে মাঠ থেকে ফসল উৎপাদনের প্রকৃত তথ্য উঠে আসছে কিনা সেটি ক্রস চেক করা প্রয়োজন। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষির যথাযথ যান্ত্রিকায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ এবং ধান উৎপাদন তথা সার্বিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে কৃষকের জন্য লাভজনক করা।
ধান উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ধানের জমিতে ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো, ফসলের উন্নত প্রক্রিয়াজাতকরণ, উন্নত পুষ্টিগুণ নিরাপদ রফতানি সম্ভাবনাময় ধানের জাত উদ্ভাবনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন মন্ত্রী। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ধান উৎপাদনে পানি প্রয়োজনের বিষয়ে ব্রি ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ সালের তথ্য পর্যালোচনা করেছে।
সেখানে দেখা গেছে, ধান উৎপাদনে সর্বোচ্চ গড় ১ হাজার ৩০০ এবং সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এখন পর্যন্ত ব্রি ৭টি হাইব্রিডসহ ১০৫টি উচ্চফলনশীল জাত ও ২৫০টি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতের চাষাবাদ হয় এবং এর থেকে আসে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৯১ ভাগ।
বর্তমান সরকারের আমলে ব্রি ধানের জাত উদ্ভাবনে বড় সাফল্য পেয়েছে। এ সময়ে ৫৪টি জাত ও ২০০-এর বেশি প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অভিঘাত সহনশীল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্রি বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ৯টি লবণসহিষ্ণু, ২টি জলমগ্নতাসহিষ্ণু, ৩টি খরাসহিষ্ণু, একটি খরা পরিহারকারী, ২টি শীত সহনশীল এবং ৪টি জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন।
ধানের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন-এ এবং আয়রন সমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত সরু ও সুগন্ধযুক্ত বোরো মৌসুমের জাত ব্রি ধান ৫০ বা বাংলামতি রফতানি সম্ভাবনাময়। জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ জাত উদ্ভাবনে বিশ্বের সর্বাধুনিক বায়োফর্টিফিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন বিজ্ঞানীরা।
ইতোমধ্যে জিংকসমৃদ্ধ ৫টি ও প্রিমিয়াম গুণসম্পন্ন ১১টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসেবে হাইজিংক সমৃদ্ধ ব্রি ধান ১০০ জাত কারিগরি কমিটির অনুমোদন শেষে জাতীয় বীজ বোর্ডে অনুমোদনের জন্য জমা দেয়া হয়েছে।
সান নিউজ/এসএ