নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের সেবার বিশ্বব্যাপী সংকট দেখা দিয়েছে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস মেশিন ভেন্টিলেটরের।
আর এই সংকটের মধ্যেই আশার আলো জাগালো বাংলাদেশের কয়েক কিৃতী সন্তান। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে প্রথম ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস মেশিন) তৈরি করেছেন দুই তরুণ ডা. সিফায়েত ইনাম স্বাক্ষর এবং ইঞ্জিনিয়ার বায়েজীদ শুভ মিলে। তারা এটির নাম দিয়েছেন 'স্পন্দন'। দেশীয় প্রযুক্তিতে এই আবিষ্কার করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষ রোগীদের জীবন বাঁচাতে অসাধারণ ভুমিকা রাখবে বলে আশাবাদী চিকিৎসকরা।
এই প্রযুক্তির বিষয়ে ডা.সাক্ষর সান নিউজকে বলেন, ‘এই কনসেপ্টটি আমাদের মাথায় আসে বছর খানেক আগে। ঢাকা মেডিকেলে এফসিপিএস ট্রেইনী কার্ডিওলজি বিষয়টির ওপর দুই বছরের প্রশিক্ষণের সময়ে দেখা গেছে আমাদের কাছে আসা অধিকাংশ রোগীই গরীব। তাদেরকে এক/ দুই দিনের আইসিইউ'র সাপোর্ট দেয়া গেলে অনেকের জীবনই হয়তো অসময়ে হারিয়ে যেতো না। ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউ বেড পাওয়াটাই একটা যুদ্ধ, খরচও অনেক বেশি। ফলে অনেক রোগী বঞ্চিত হন আইসিইউ সেবা থেকে।’
স্বাক্ষর বলেন, ‘গরীব মানুষগুলোর প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ারও সামর্থ নেই। তখন থেকে মাথায় কাজ করছিল খুব সাধারণভাবে ভেন্টিলেটর তৈরির বিষয়টি। অন্তত ৩ দিন থেকে ৪ দিন পর্যন্ত সাপোর্ট দিতে পারবে, এমন একটি বেসিক ভেন্টিলেটর বানাতে পারলে অনেক জীবন রক্ষা করতে পারবে বলে মনের মধ্যে কাজ করছিল। এক সময় আমার আত্মীয় ইঞ্জিনিয়ার শুভ'র সঙ্গে শেয়ার করি নিজের স্বপ্নটি নিয়ে। বলি, কিছু একটা করা যায় কী না। ছয় মাস আগে মূল ধারণাটি মাথায় রেখে একটি নকশা তৈরি করি আমরা। বিশেষ কিছু কারণে কাজটা কিছুদিন বন্ধ ছিলো। পরবর্তীতে যখন মহামারী আকারে যখন ছড়িয়ে পড়ছে চারদিক, লক্ষ্য করলাম ইতালি, আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সবাই মোটামুটি একটি বড় সংকটে ভুগছে। আর তা হল ভেন্টিলেটর।’
তরুণ এই উদ্ভাবক জানান, ‘বিশ্বব্যাপী মেডিকেল কোম্পানিগুলোর ভেন্টিলেটর তৈরির সংখ্যা সীমিত। যেগুলো ছিল, তাও বিক্রি হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনা অধিক মাত্রায় ছড়িয়ে পরলে অবস্থা ভয়াবহ হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা হচ্ছিল। এসব বিষয় মাথায় রেখে গত এক সপ্তাহ ধরে দ্রুত গতিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দুই দিন আগে পুরো বিষয়টির একটি প্রোটো (প্রথমিক) তৈরি করেছি। যেহেতু এটি একটি চিকিৎসা পণ্য, তাই এটি বাজারে আনতে কিছুটা আইনি প্রক্রিয়াতো রয়েছেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি স্যাম্পল এরই মধ্যে তৈরি করেছি, যার পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে আরো বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। চূড়ান্তভাবে বাজারে আনতে আরো কিছু সময় লাগবে। এছাড়া ফান্ডেরও একটি ব্যাপার আছে। প্রয়োজনীয় অর্থের নিশ্চয়তার সাথে খুব দ্রুত কাজগুলি গুছিয়ে ফেলতে পারলে আগামী এক মাসের মধ্যে বৃহৎপরিসরে এটির উৎপাদন কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা রাখছি। বাজারে বর্তমানে এক একটি পূর্ণাঙ্গ ভেন্টিলেটরের মূল্য পড়ে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু করোনার মতো মহামারী ঠেকাতে আমাদের বেসিক ভেন্টিলেটরের প্যাকেজটির মূল্য এক লাখ টাকার মধ্যে রাখতে পারবো, যা সব শ্রেণির মানুষের জন্য সাধ্যের মধ্যে থাকবে।’
ডা. স্বাক্ষর জানান, এই মুহুর্তে পন্যটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। যাচাই বাছাইয়ের পর যদি পূর্ণাঙ্গ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, তখন ছোটখাটো একটি ফ্যাক্টরির মত চালু করা হবে।
কুমিল্লার গোবিন্দপুরে ডা. কাজী সিফায়েত ইনাম সাক্ষরের জন্ম। মা সাহিদা খাতুন জড়িত শিক্ষকতা পেশায়, বাবা কাজী এনামুল হক ব্যবসায়ী। কুমিল্লার ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন স্বাক্ষর। বর্তমানে এফসিপিএস কার্ডিওলজির ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি।