নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ওষুধ, কাঁচামাল ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে বাকি সব দোকানপাট। বন্ধ হয়ে গেছে গণপরিবহন। করোনা আতঙ্কে অনেক ট্রাক ড্রাইভারও নামছে না রাস্তায়। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেড় হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। এমন বাস্তবতায় ধস নেমেছে দেশের পোল্ট্রি শিল্পে।
সময় পাড় হয়ে গেলেও খামারিরা বিক্রি করতে পারছেন না পোল্ট্রি মুরগি। এতে প্রতিদিন খাদ্যের জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের। সময়মতো মুরগি বিক্রি করতে না পাড়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এর জন্য নতুন করে আর লেয়ার বা ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উঠাচ্ছেন না খামারিরা। ফলে বিপাকে পড়েছেন হ্যাচারির মালিকরা।
যশোরাঞ্চলে কাজী হ্যাচারি ও আফিল হ্যাচারিসহ ছোট-বড় পাঁচটি হ্যাচারিতে প্রতিদিন গড়ে ৪ লাখ বাচ্চা উৎপাদিত হয়। কিন্তু খামারিরা একদিনের বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দেয়া উৎপাদিত বাচ্চা বিক্রি করতে পারছেন না হ্যচারি মালিকরা । এর ফলে দৈনিক গড়ে মারা যাচ্ছে প্রায় দুই লাখ পোল্ট্রি মুরগির বাচ্চা। কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে হ্যাচারির মালিকদের।
হ্যাচারি মালিকরা জানান, এসব বাচ্চা দ্রুততম সময়ে হ্যাচারি থেকে খামারে স্থানান্ত করতে না পারায় মারা যাচ্ছে বাচ্চা। একটি বাচ্চা উৎপাদনে খরচ পড়ে ৩২ টাকা। ৩২ টাকার বাচ্চা এখন ফ্রিতে দিলেও নিতে চাচ্ছেন না খামারিরা।
এ ফার্মের টেকনিক্যাল ম্যানেজার তোফায়েল আহমেদ জানান, হ্যাচারিগুলোতে স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন প্রক্রিয়া কারণে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধও রাখা যাচ্ছে না হ্যাচারি। প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ২১ দিনের ডিম ইনকিউবেটর মেশিনে দিতে হয়। উৎপাদন বন্ধ করতে হলে ২১ দিন অপেক্ষা করতে হবে। আবার উৎপাদন প্রক্রিয়া একবার বন্ধ গয়ে গেলে পুনরায় চালু করতে অনেক খরচের বিষয়। তাই হ্যাচারি পুরোপুরি বন্ধও করা যাচ্ছে না। ফেল প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
একই সাথে লোকসান গুনতে হচ্ছে পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ীদেরও। কাজী, প্রভিটা ও প্যারাগনসহ দেশের সব ফিড মিলের বিক্রি কমে গছে। নতুন করে বাচ্চা না উঠানোর ফলে ফিডের চাহিদা অর্ধেকে নেমে এসেছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বড় ব্যবসায়ীরাও। ছোট ব্যবসায়ীদের অবস্থা আরও করুণ।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রায় দেড় লাখ পোল্ট্রি খামার রয়েছে। বর্তমানে এ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক। এভাবে লোকসান গুনতে থাকলে চাকরি হারানোর সঙ্কা রয়েছে এসব শ্রমিকদের। করোনাভাইরাসের কারণে বড় ধরণের লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের পোল্ট্রি খামারী ও হ্যাচারির মালিকরা।