নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার দায়ে দণ্ডিত এই আসামিদের আপিল আবেদনের ওপরও শুনানি শুরু হয়েছে একসাথে। গণমাধ্যমকে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উল্লাহ জানিয়েছেন যে, এখন থেকে এই শুনানি নিয়মিত চলবে।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ সোমবার (১১ জানুয়ারি) এই ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়।
মামলাটির পরবর্তী প্রক্রিয়ার ধারণা দিয়ে আইনজীবী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হয়েছে আজ। আজ থেকে আগামী চার কার্যদিবসে শুনানি শেষ করা হবে। এর মধ্যে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করবেন। আমরাও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানি শেষ করার পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমির উদ্দিন তার যুক্তিতর্ক শুনানি করবেন। এরপর মামলাটি রায়ের জন্য থাকবে।
এর আগে হাইকোর্টের রোববারের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) আপিলটি শোনানোর জন্য তোলা হয়। ২০১৮ সালেও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য ছিল।
আদালত সূত্র জানায়, বিচারিক আদালতে কোনো মামলায় আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে সে মামলার নথি সংশ্লিষ্ট আদালত হাইকোর্টে প্রেরণ করে। আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ মামলার রায়সহ সব নথি ওই বছরের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
এরপর প্রধান বিচারপতির কাছে নথি উপস্থাপন করা হলে তিনি জরুরি ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এরইমধ্যে পেপারবুক তৈরি করা হয়। এরপর মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত শেষে আজ কার্যতালিকায় দেয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আকতার, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর।
এছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেয়া হয়েছে।
২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় তৎকালীন কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন মামলা দায়ের করেন।
২০০১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালের ২৯ জুন আরও নয়জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এরপর ২০১০ সালে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা-২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। সেখানে এই মামলার বিচার সম্পন্ন হয়।
রায়ের আসামিদের মধ্যে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে তা ফায়ারিং স্কোয়াডে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই মামলায় চারজনকে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর খালাস পেয়েছেন ১০ জন। মোট আসামি ছিলেন ২৪ জন।
সান নিউজ/এস