নিজস্ব প্রতিবেদক : অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান ও তার স্ত্রীরসহ সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সেলিম গ্রেপ্তার আছেন।
সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আদালতের আদেশ অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার একটি দৈনিক সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে ১৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার তথ্য দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংকের গুলশান এভিনিউ শাখার চারটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি হিসাব প্রতিষ্ঠানের নামে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে প্রধান বিউটি কেয়ার লিমিটেড, পি২৪ ল ফার্ম লিমিটেড ও জাপান বাংলাদেশ ট্রেডিং। এই তিনটি হিসাব পরিচালনাকারী হিসেবে ছিলেন সেলিম প্রধান নিজেই।
একই শাখায় চতুর্থ হিসাবটি সেলিম প্রধানের নামেই। যার পরিচালনাকারী হিসেবে ছিলেন সেলিম ছাড়াও চৌধুরী আলম। এই চারটি হিসাবে জমা আছে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৪৭০ টাকা। একই ব্যাংকের মূল শাখা এবং কারওয়ান বাজারে সেলিম প্রধানের নিজের হিসাব দুটিও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এই দুটি হিসাবে জমা আছে চারশ ৬ টাকা।
এছাড়া তার স্ত্রী মাসুমা প্রধানের নামে সিটি ব্যাংকের গুলশান এভিনিউ এবং গুলশান উইমেন শাখায় তিনটিসহ চারটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। হিসাবগুলোতে মোট জমা আছে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৮১৪ টাকা। একই ব্যাংকের মূল শাখায় সুফিয়া আক্তার স্মৃতির নামে তিনটি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এই হিসাবগুলোও সেলিম প্রধান বেনামে পরিচালনা করতেন। এই তিনটি হিসাবে মোট দুই লাখ ৯০ হাজার ১৯৯ টাকা জমা আছে।
এর বাইরে সেলিম প্রধান, মাসুমা প্রধান, সুফিয়া আক্তার স্মৃতি এবং রিজিয়া সুলতানা ইরফান নামে পাঁচটি ক্রেডিট কার্ডও অবরুদ্ধ করেছে দুদক। এর মধ্যে মাসুম প্রধান যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেন তার হিসাবের নাম মাহমুদা আক্তার প্রধান।
দুদক জানায়, অবরুদ্ধ অবস্থায় এসব ব্যাংক হিসাব থেকে কোনো টাকা তোলা যাবে না। তবে টাকা জমা করা যাবে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে ৫৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ২২ কোটি টাকা থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে এক মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সেলিম প্রধান ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার অবৈধ স্থাবর এবং ৫৭ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার ২৮৮ টাকার অবৈধ অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৫৭ কোটি ৭৯ লাখ ২৮৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। যা তার আয়ের সাথে সংগতি বিহীন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ মর্মে তদন্তে প্রতিষ্ঠিত। এই অবৈধ সম্পদ থেকে ২১ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ১৪৫ টাকা সেলিম প্রধান থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে অবৈধ আয়ের উৎস গোপন করেছেন।’
২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলাটি করেন উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।
২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অনলাইন জুয়ার কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে সেলিম প্রধানকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরে তাকে নিয়ে গুলশানে অফিস কাম বাসায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় র্যাবের পক্ষ থেকে সেলিম প্রধানের নামে গুলশান থানায় অর্থপাচার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় কয়েক দফা সেলিম প্রধানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব ও পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সান নিউজ/আরআই