নিজস্ব প্রতিবেদক : কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্র ভিত্তিক জরিপ সংস্থ্যা ‘বিলস’। এতে দেখা যায় ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গত ৬ বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ৮ হাজার ৮।
তাদের মধ্যে শুধু নিহত শ্রমিকের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৭৯৫, আহত ৩ হাজার ২১৩ জন। শুধুমাত্র ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭২৯ শ্রমিক নিহত, আহত ৪৩৩ জন। এছাড়া করোনাকালীন ২০২০ সালে সৃষ্ট শ্রম অসন্তোষের কারণগুলোর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই বকেয়া বেতন সংক্রান্ত।
বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্র ভিত্তিক ‘বিলস’ জরিপ-২০২০ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (০৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের উদ্যোগে বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্র ভিত্তিক বিলস জরিপ-২০২০ শীর্ষক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বিলস ভাইস চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য শিরীন আখতার। সঞ্চালনায় ছিলেন বিলস নির্বাহী পরিষদ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিলস ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসাইন এবং আমিরুল হক আমিন, বিলস উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাকিল আখতার চৌধুরী, ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, বাংলাদেশ লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, বিলস পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ এবং নাজমা ইয়াসমীন। জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিলস উপপরিচালক মো. ইউসুফ আল মামুন।
সভায় লিখিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭২৯ জন শ্রমিক নিহত এবং ৪৩৩ জন শ্রমিক আহত হন। নির্যাতনের শিকার হন ৫৯৬ জন শ্রমিক, যার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে ২৩২ জন এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে ৩৬৪ জন নির্যাতিত হন। বিভিন্ন সেক্টরে মোট ৫৯৩টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ২৬৪টি শ্রমিক আন্দোলন হয় তৈরি পোশাক খাতে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭২৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৭২৩ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী শ্রমিক। খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ৩৪৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কৃষি খাতে। এছাড়া দিনমজুর ৪৯ জন, বিদ্যুৎ খাতে ৩৫, মৎস্য শ্রমিক ২৭, স্টিল মিলে ১৫, নৌ-পরিবহন শ্রমিক ১৫, মেকানিক ১৪, অভিবাসী শ্রমিক ১৫ এবং অন্যান্য খাতে যেমন ইটভাটা, হকার, চাতাল, জাহাজ ভাঙাসহ ইত্যাদি খাতে ৬০ জন শ্রমিক নিহত হন।
বিশেষত; ২০১৯ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় বিভিন্ন খাতে ১ হাজার ২০০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ১৯৩ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী শ্রমিক। খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটে পরিবহন খাতে ৫১৬ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে নির্মাণ খাতে ১৩৪ জন। তৃতীয় সর্বোচ্চ শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে কৃষি খাতে ১১৬ জন।
২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৪৩৩ জন শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে ৩৮৭ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী শ্রমিক। মৎস্য খাতে সর্বোচ্চ ৬৮ জন শ্রমিক আহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নির্মাণ খাতে ৪৯ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ৪৮, পরিবহন খাতে ৪৭, জুতা কারখানায় ২০, নৌ-পরিবহন খাতে ১৬, তৈরি পোশাক শিল্পে ৩৭, জাহাজ ভাঙা শিল্পে ২৯, দিনমজুর ১৬, উৎপাদন শিল্পে ১৯, স্টিল মিলে ১৯ ও কৃষিতে ১০ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া অন্যান্য খাতে ৪০ জন শ্রমিক আহত হন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় বিভিন্ন খাতে ৬৯৫ জন শ্রমিক আহত হন। এদের মধ্যে ৬৭৮ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী শ্রমিক। মৎস্য খাতে সর্বোচ্চ ১৩২ জন শ্রমিক আহতের ঘটনা ঘটে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রমিক আহতের ঘটনা ঘটে নির্মাণ খাতে ১১৭ জন। তৃতীয় সর্বোচ্চ শ্রমিক আহতের ঘটনা ঘটে পরিবহন খাতে ১০৪ জন।
সান নিউজ/এসএ