নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরা করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের জনজীবন। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন, দোকানপাট ও হাটবাজার। এমন পরিস্থিতিতে কমে গেছে অর্থের লেনদেন। এর ধাক্কা লেগেছে দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। যে খাত থেকে দেশে মোট শ্রমশক্তির ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন। কাজা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে এ খাতের প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ মানুষ।
করোনাভাইরাসের কারণে লোকসানে পড়তে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগতারা। বেচাকেনা নেমে এসেছে শূণ্যের কোঠায়। এসব উদ্যোগতাদের এমন কোন পুঁজি নেই যে কর্মচারিদের বেতন দিয়ে রাখতে পারবে। তাদের বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যাবে। উদ্যোক্তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। ফলে এর প্রধান বলি হবে কর্মচারিরা। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, স্থায়ীভাবে কাজ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে এ বিশাল শ্রমশক্তি।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, করোনাভাইরাস ভয়ংকরভাবে থাবা বসাতে যাচ্ছে দেশের আর্থনীতিতে। অর্থনৈতিক ক্ষতি কত হবে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে এরইমধ্যে সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। এ খাতের শ্রমিকরা এমনিতেই বঞ্চনার শিকার হন। কোনো চুক্তি ছাড়াই কাজ করেন তারা। ফলে সহজেই চাকরি হারাতে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে দেশের ব্যাংকিং খাতের উচিত হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা। কেননা এ উদ্যোক্তারাই কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রধান খুঁটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ‘শ্রমশক্তি জরিপ’ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৮ লাখ। এর মধ্যে মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। বাকিরা ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অধিকাংশ শ্রমিকই অপ্রাতিষ্ঠানিক। কৃষি খাতে মোট শ্রমশক্তির ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক, শিল্প খাতে ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ আর সেবা খাতে শ্রমশক্তির ৭১ দশমিক ৮ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক। এর মধ্যে নারী শ্রমিক রয়েছেন ১ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার আর পুরুষ রয়েছেন ৩ কোটি ৪৬ লাখ ১৩ হাজার।
এছাড়া গ্রাম ও শহরের হিসাবও আলাদা করে দেখানো হয়েছে প্রতিবেদনে।, অপ্রাতিষ্ঠানি খাতে গ্রামে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার আর শহরে ১ কোটি ৩০ লাখ ৯৩ হাজার শ্রমিক কাজে নিয়োজিত।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কাজ হারানোর ঝুঁকি নয়, ইতোমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। ঢাকায় সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিকরা গ্রামে চলে গেছেন। পরিস্থিতি উন্নতি হলে আগের জায়গায় অনেকেই কাজ ফিরে নাও পেতে পারেন। তাদের অর্থনীতির চাকা এখন বন্ধ। তাই এখনই পরিকল্পনা নিয়ে এ শ্রেণির মানুষের জন্য নগদ টাকা সহায়তা ঘোষণা করা উচিত।
পরে দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এখন জীবন ও জীবিকার বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে তাদের সামনে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত দেশের অর্থনিতির মূল চালিকা শক্তি হলেও শ্রমিকদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি এ খাতে সবচে বেশি। এখন কাজ হরিয়ে এসব শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়লে তাদের জীবনযাত্রার মান কমে গিয়ে দারিদ্র্য সীমার নিছে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এখনই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।