নিজস্ব প্রতিনিধি,কুড়িগ্রাম : ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারিতে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে ফেলানীকে। এর পর দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর নিথর দেহ। গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত।
পরে বিএসএফের বিশেষ কোর্টে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুম ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। কিন্তু এর পর পেরিয়ে গেছে ৯ বছর। ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম নুরু বলেন, ফেলানী হত্যার বিচার চেয়ে অনেক ঘুরেছি।
মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গেছি। বিচার পেলাম না। আর কতকাল ঘুরব? এক সময় সবাই পাশে থাকলেও এখন কেউ পাশে নেই। সেদিনটি ছিল শুক্রবার। ভোর ৬টা ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্ত টপকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে আধা ঘণ্টা ধরে ছটফট করে নির্মমভাবে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ে কিশোরী ফেলানী। এর পর ফেলানীর নিথর দেহ কাঁটাতারের ওপর ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা।
এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফের এ কোর্টে সাক্ষ দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। সেই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনঃবিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা।
২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের দুই জুলাই এ আদালত আবার আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পর একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ মাসুম ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিমকোর্টে রিট পিটিশন করে।
সেই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও এখনও শুনানি হয়নি। এদিকে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা-মা। ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ফেলানী হত্যার ৯ বছর হয়ে গেল।
কিন্তু বিচার দেয় দেয় বলে দিচ্ছে না, এ হত্যার সঠিক বিচার হলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পেত। আমি সরকারের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি। কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, এখন পর্যন্ত রিটটি তালিকাভুক্ত হয়নি। তিনি আরও বলেন, এটা ঝুলিয়ে না রেখে নিষ্পত্তি করা উচিত। তবে তিনি আশা ব্যক্ত করেন ভারতীয় উচ্চ আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা উভয় দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য ইতিবাচক হবে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও গ্রামে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। তাই ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে রওনা হন দেশের উদ্দেশে। ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের ওপর মই বেয়ে আসার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর। ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, ফেলানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিজিবি আমাকে প্রতি বছর এই দিনে ৫ হাজার করে টাকা দেয়। এ ছাড়া আর কোনও সহোযোগিতা পাই না। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না।
সান নিউজ/এসএ