নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদায়ী বছরের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজারে অবস্থিত হাজী সেলিমের বাড়িতে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি লাইসেন্স বিহীন অস্ত্র ও মাদক পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে।
একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব। এ ছাড়া বাসায় অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ৬ মাস এবং মাদক রাখা ও সেবনের দায়ে আরও ৬ মাস করে মোট ১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন সে সময়কার র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা তদন্তে নেমে ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করতে পারিনি। ফলে তাকে অব্যাহতি দিয়ে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) প্রস্তুত করে আদালতে জমা দিয়েছি। আর ইরফান সেলিমের দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ করা গেছে। সেই মর্মে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, একই সঙ্গে, একই অপরাধে গ্রেফতার করা হয় ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষীকে। র্যাবের অভিযোগ ছিল, অস্ত্র ও মাদকসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে একজনকে অব্যাহতি দিয়ে আরেকজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র কেন?
এমন প্রশ্নে ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘র্যাব অস্ত্র, মাদকসহ জব্দ করা যে তালিকা পুলিশের কাছে জমা দিয়েছিল, সেখানে কোথাও বলা হয়নি ইরফানের কাছেই অস্ত্র পাওয়া গেছে। এমনকি সেখানে বলা হয়নি যে ইরফানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অস্ত্র বা মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি সেই জব্দ তালিকায় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরও ছিল না।
পরে স্বাক্ষরের ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। ফলে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা প্রমাণ করা যায়নি। তবে তার দেহরক্ষীর বডিতেই মাদক পাওয়া গেছে বলে র্যাব জানিয়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা গেছে।’
মঙ্গলবার ( ৫ জানুয়ারি) রাতে ডিসি মিডিয়ার বক্তব্যের বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন,‘আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে সাক্ষীদের সামনে আমরা সবকিছু জব্দ করি এবং যা যা জব্দ করি এবং কোথায় কীভাবে পাওয়া গেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে মামলা দুটির এজাহারে পুলিশকে জানাই। আমরা জানি না, পুলিশ তদন্তে গিয়ে কী পেল আর কী পায়নি।’
র্যাবের বক্তব্য এক রকম আর পুলিশের বক্তব্য আরেক রকম। তাহলে তো এই প্রশ্ন আসতেই পারে, র্যাব কি গণমাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়েছিল। এমন প্রশ্নে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে অভিযান পরিচালনা করেছি এবং তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছি।’
এদিকে মঙ্গলবার ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে র্যাব সদর দফতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে র্যাব সেবা সপ্তাহ ও রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাসায় অস্ত্র ও মাদক পাওয়ায় ইরফান সেলিমকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বাসায় অভিযানে যা পাওয়া গেছে, তাই মামলায় দেখানো হয়েছে। ইরফান সেলিমের মামলা আদালতে বিচারাধীন, ফলে এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করবো না।’
সেই অনুষ্ঠানে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘র্যাবের অভিযানে ওয়াকিটকিসহ যেসব মালামাল পাওয়া যায়, সেসবের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে আমরা অবহিত নই।
পুলিশের প্রতিবেদন হাতে পেলে আমরা জানাতে পারব এতে কী আছে।’ আশিক বিল্লাহ আরও বলেন, ‘র্যাব বাংলাদেশ পুলিশেরই একটি বিশেষায়িত বাহিনী। অর্থাৎ বাংলাদেশ পুলিশের যেসব শাখা আছে তার মধ্যে র্যাব অন্যতম। এ রকম একটি বাস্তবতায় আমরা অভিযানে যেসব আলামত ও মালামাল পেয়েছি সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
গত বছরের ২৬ অক্টোবর চকবাজারে হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান শেষে আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ইরফান সেলিমের বাসা থেকে বিভিন্ন ধরনের ৩৮ থেকে ৪০টি ওয়াকিটকি সেট ও মূল স্টেশন বা কন্ট্রোল রুম জব্দ করা হয়েছে।
যেগুলো এলাকা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। মূলত নিরাপত্তা বাহিনী এগুলো ব্যবহার করে থাকে। তবে অভিযানের সময় ইরফানের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার ব্যবসায়িক কাজে এটা ব্যবহার করতেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘কন্ট্রোল রুম থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ভেরি হাইসিকিউরিটি সেট (ভিএইচএস) উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা ওয়াকিটকির একটি আধুনিক সংস্করণ। এ ছাড়া বাসায় টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু অবৈধ জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেহরক্ষী জাহিদের কাছ থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে।’
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর রাতে ইরফান সেলিম নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদের ওপর হামলা করে প্রাণনাশের হুমকি দেন। সেই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি ইরফান সেলিম। ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদ মামলার ৩ নম্বর আসামি। মামলায় মোট আসামি করা হয় ৭ জনকে। মামলা করেন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ।
সান নিউজ/এসএ