নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে কাজ হারিয়ে বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতার থেকে ৪৩ হাজার ৮১৩ জনকর্মী খালি হাতে দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে এখনও দেশে আটকা পড়ে আছেন প্রায় ১২ হাজার প্রবাসি রেমিটেন্স যোদ্ধা।
কাতার ফেরত যাওয়ার দাবিতে এ পর্যন্ত ৫ বার জাতীয় প্রেসক্লাব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন, আন্দোলন করলেও কাটেনি অনিশ্চয়তা। কাতার প্রবাসীরা জানান, এই মুহূর্তে অন্তত ১২ হাজার প্রবাসী কাতার যেতে না পেরে দেশে আটকা পড়ে আছেন।
লকডাউন শুরু হলে কেউ কাজ হারিয়ে আবার কেউ ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। তাদের বেশির ভাগ কর্মীই কাতার প্রবেশের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাদের দাবি, কাতার সরকার রি-এন্ট্রি পারমিট দিতে গাফিলতি করাতেই এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তারা চান, কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় এ সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।
দেশে আটকা পড়া কাতার প্রবাসীরা তাদের পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের কাতারের আইডি আছে এবং রিটার্ন টিকিটও আছে। কিন্তু রি-এন্ট্রি পারমিট মিলছে না। অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা ইতোমধ্যে কাতারে যেতে পারলেও বাংলাদেশিরা সে সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের মতে, বাংলাদেশিদের যে গতিতে রি-এন্ট্রি পারমিট দেওয়া হচ্ছে তাতে ২-৩ বছর লেগে যাবে কাতারে যেতে।
কাতার থেকে এসে আটকে পড়া ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বারবার বিক্ষোভ করার অবস্থা নেই। আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। না পাঠাতে পারলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন।
মো রুবেল জানান, ভারত ও নেপালিদের রি-এন্ট্রি পারমিট হয়ে গেছে, আমাদের হয়নি। আমাদের এখানে কারও ভিসার মেয়াদ নেই। আমরা বৈধ কর্মী হওয়া সত্ত্বেও যাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে না। নান্টুলাল ঘোষ বলেন, আমাদের সমস্যা রি-এন্ট্রি পারমিট নিয়ে। এটা হয়ে গেলেই যেতে পারি। কোম্পানি আবেদন করেছে, অনেক লোক যাচ্ছে। আমরা পারছি না।
আমি যে ঘরে থাকি সেখানের অন্যরা চলে এসেছে, আমি পারিনি। কিন্তু আমরা সবাই একই কোম্পানিতে কাজ করি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাতার সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় করোনা পরিস্থিতির কারণে ধাপে ধাপে লোক নেওয়ার কথা জানিয়েছে। কাতার প্রবেশের পর বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয় নিজ খরচে। তবে সেই পরিমাণ হোটেল কিংবা জায়গা না থাকায় সঙ্কটে পড়েছে দেশের সরকার।
তাছাড়া সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার কর্মী কাতার ফেরত গেছে বলে দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে। কাতার সরকারের ধাপে ধপে ধাপে ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে দূতাবাস। এ ছাড়া কর্মীদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে একটি কমিটিও করা হয়েছে।
যে কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ধাপে ধাপে লোক ফেরত নেওয়ার কথা জানিয়েছে কাতারের শ্রম মন্ত্রণালয়। দেশে আটকা পড়া প্রায় ১২ হাজার প্রবাসী তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আমরা ৭০০ জনের তালিকা করে পাঠিয়েছি মন্ত্রণালয়ে।
এ ছাড়া দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে যেটি প্রবাসীদের বিষয়ে কাজ করছে।খুব তাড়াতাড়ি তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে কাতার সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে এবং কাতার ফেরত সবাই পর্যায়ক্রমে সেই দেশে যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে কাতারের বাংলাদেশ দুতাবাস সুত্রে জানা গেছে।
সান নিউজ/এসএ