মাহমুদুল আলম : গত বছর ২৫ অক্টোবর রাতে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ‘সংসদ সদস্য’ লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। রাজধানীর কলাবাগান সিগন্যালের পাশে এ ঘটনা ঘটে। রাতে এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হলে পরের দিন ২৬ অক্টোবর ভোরে হাজী সেলিমের ছেলে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর (পরবর্তীতে বরখাস্ত) ইরফানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে দুপুরে ইরফানকে গ্রেফতার করে র্যাব।
ওই দিন পুরান ঢাকার চকবাজারে হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে অবৈধ মদ, অস্ত্র ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে ইরফান সেলিম ও জাহিদকে হেফাজতে নেয়। মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ২ আসামিকে মোট ১৮ মাস করে কারাদণ্ড দেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) জামিন পান ইরফান সেলিম।
তবে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ করা একটি ভিডিও ভাইরাল হলে এবং পরবর্তীতে সময়ে সময়ে আইনি প্রক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইরফান সেলিমকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানামূখী আলোচনা - সমালোচনা শুরু হয়। এসবের মধ্যে প্রাধান্য পায় তার বিরুদ্ধে আর কী মামলা আছে বা তার কী সম্পদ আছে- এসব বিষয়? যা এখনো অব্যাহত আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইরফান সেলিমের হলফনামা খুঁজে দেখা গেল কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার আগে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না।
সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ ইরফান সেলিম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য স্থানীয় নির্বাচন কমিশনে এই হলফনামা দাখিল করেন। এতে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা আছে, ডিপ্লোমা ইন বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন।
হলফনামায় তার আয়ের উৎসের বিবরণে ‘অন্যান্য (সম্মাসীভাতা)’ বাবদ আয় দেখানো হয়েছে বাৎসরিক ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া ‘বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া’, ‘ব্যাবসা’, ‘শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত’সহ এই বিবরণের সবগুলো ঘরেই প্রার্থীর এবং প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয়ের ঘরে লেখা হয়েছে ‘প্রযোজ্য নহে’।
হলফনামায় প্রার্থী ইরফান সেলিম ৬ নম্বর পয়েন্টে ‘আমার নিজের, আমার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি / ব্যাক্তিবর্গ এবং আমার স্ত্রীর পরিসম্পদ এবং দায়ের বিবরণী’তে ‘মনোনয়ন পত্র দাখিলের তারিখে সম্পদের ধরন’-এ অস্থাবর সম্পদের হিসাবে তার নিজ নামে নগদ ২৫ লাখ ৭৩ হাজার তিনশত ৮৮ টাকা আছে বলে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া ‘বন্ড, ঋণ পত্র, স্টক একচেঞ্জ তালিকাভূক্ত ও তালিকাভূক্ত নয় কোম্পানীর শেয়ার (পরিমাণ, অর্জন কালীন সয়ের মূল্যসহ)’ চার কোটি ৮৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমান, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলংকারাদী, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, আসবাব পত্রের বিবরণী মূল্যসহ, অন্যান্য ব্যবসায়ের মূলধনের ক্ষেত্রেও ‘প্রযোজ্য নহে’ কথাটি উল্লেখ করেছেন। নিজ নামের ক্ষেত্র ছাড়া স্ত্রীর নামে এবং নির্ভরশীলদের নামের ক্ষেত্রেও একই কথা ‘প্রযোজ্য নহে’ লেখা রয়েছে।
আর স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে ‘দালান (আবাসিক বা বাণিজ্যিক) সংখ্যা’ এবং ‘বাড়ি/এপার্টমেন্টসংখ্যা’সহ ছয়টি পয়েন্টের সব কটিতেই লেখা আছে ‘প্রযোজ্য নহে’। এক্ষেত্রে তার নিজ নামে, স্ত্রীর নামে, নির্ভরশীলনামে এবং যৌথ মালিকানা- সব ক্ষেত্রেই লেখা আছে ‘প্রযোজ্য নহে’।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই হলফনামায় স্বাক্ষর করেন ইরফান সেলিম।
সান নিউজ/এমএ/এস