মাহমুদুল আলম : প্রিমেচিউর সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরছেন এক পিতা। কারণ তার নবজাতক সন্তান পৃথিবীতে এসেছে ’শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত মারাত্মক সমস্যা, রক্তে ইনফেকশন, ফুসফুসে পানি জমা, হার্টে ছিদ্র, চোখ না ফোটা, ওজন কম হওয়া ও হরমোন সমস্যা’ নিয়ে।
তবে এই পিতার ঘোরা কেবল হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল নয়। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ঋণের জন্য তাকে আত্মীয়-স্বজনের কাছেও ছুটতে হয়েছে। তাতেও কুলাতে না পেরে বুকের ধন সন্তানকে বাঁচাতে এবার দেশের বিভিন্নস্থানে কর্মরত তার সহকর্মীদের প্রতি আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করেছেন তিনি।
কারণ এসবের চিকিৎসাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। পুত্রের চিকিৎসা বাবদ এরই মধ্যে ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে তার। যার মধ্যে ৯ লাখ টাকাই নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার করা।
এদিকে, এই সময়ের মধ্যেই গত ৩ অক্টোবর তার বাবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।বাবার চিকিৎসা বাবদও খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, তার স্ত্রী বেগম আসমা উল হুসনাও প্রিমেচিউর সন্তান প্রসব পরবর্তী জটিলতা সংক্রান্ত চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।
এই অবস্থায় সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে দেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রতি আবেদন করেছেন মাদারীপুরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ করে সুপ্রিম কোর্ট থেকে সম্প্রতি একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।রেজিস্ট্রার গোলাম রব্বানীর পাঠানো এই চিঠিতে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাও দেয়া হয়েছে। যাতে লেখা হয়েছে- ”হিসাবের নাম: শহিদুল ইসলাম, সঞ্চয়ী হিসাব নং-১১৯.১০১.৯৫১৭৭, ডাচ বাংলা ব্যাংক লি:, দনিয়া শাখা, ঢাকা। রাউটিং নম্বর:-০৯০২৭১৪২৩”।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের 'স্ত্রী বেগম আসমা-উল হুসনার প্রিমেচিউরড্ রাপচার অব মেমব্রেন জনিত কারণে ঢাকাস্থ ইসলামিক সেন্ট্রাল হাসপাতালে শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে ৭ (সাত) মাসের প্রিমেচিউরড পুত্র সন্তান মো. আব্দুল্লাহ্ জন্মগ্রহণ করলে ডা: ফেরদৌস আরা বানু (প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন)-এর পরামর্শে তার নবজাতক পুত্র সন্তানকে সুচিকিৎসার জন্য এন.আই.সি.ইউ-তে স্থানান্তর করলে গত ১৪.০৫.২০২০ থেকে ০১.০৬.২০২০ তারিখ পর্যন্ত লাইফ সাপোর্টে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।'
'ইতোমধ্যে তার সন্তানকে এন.আই.সি.ইউ-তে রেখে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা প্রদানান্তে ছাড়পত্র প্রদান করলে সহকারী অধ্যাপক ডা: মো: ইসমাইল হোসেন (নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ) এর পরামর্শক্রমে তার প্রায় মৃত্যু শয্যাশায়ী পুত্রকে চোখের রেটিনা সমস্যার জন্য গত ১১.০৬.২০২০ হতে অদ্যাবধি ৬ (ছয়) বার ইস্পাহানি ইসলামিক আই ইনস্টিটিউট এন্ড হসপিটাল, বাংলাদেশ-এ নিয়ে যাওয়াসহ চোখের রেটিনা সমস্যা জনিত চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। তার সন্তানের হেয়ারিং টেস্টের জন্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেয়ারিং এন্ড স্পেস ফর চিলড্রেন-এ ভর্তি করে শ্রুতি সমস্যা জনিত মানসিক বিকাশের জন্য গত ৩১.০৮.২০২০ তারিখে ভর্তি করে চিকিৎসা গ্রহণ চলমান রয়েছে।’
এইভাবে গত ১৪ মে হতে তার নবজাতক পুত্র সন্তান মো: আব্দুল্লাহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটির এমন চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে হবে।
চিঠিতে বলা হয়, 'তার নবজাতক পুত্র সন্তান মো: আব্দুল্লাহ’র সুচিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার সন্তানের সুচিকিৎসা অব্যাহত রাখতে না পারলে জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।'
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, 'তার পিতা মো: আব্দুল সাত্তার গত ২০১৮ হতে লিভার সিরোসিস, হার্ট ব্লক, কিডনি সমস্যা জনিত রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত ০৩.১০.২০২০ তারিখে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তার পিতার সুচিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ (দশ) লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এমতাবস্থায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব শহিদুল ইসলাম তার নবজাতক পুত্র সন্তান মো: আব্দুল্লাহ্’র সুচিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছেন।'
“এমতাবস্থায়, মাদারীপুরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব শহিদুল ইসলাম এর নবজাতক পুত্র সন্তান মো: আব্দুল্লাহ্’র সুচিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদনের বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো। একই সাথে আপনার অধীনস্থ একজন কর্মকর্তাকে এতদ্উদ্দেশ্যে দায়িত্ব প্রদানক্রমে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয় করার জন্যও অনুরোধ করা হলো।”
সান নিউজ/এমএ/কেটি